5:1 টেস্টিং এর সিদ্ধান্তই কি শেষ পর্যন্ত কাল হয়েছে আমাদের?
প্রদীপ চক্রবর্তী
এক অভাবিত সময়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হচ্ছে ত্রিপুরা। করোনা গ্রাফ বাড়ছে তো বাড়ছেই। হ্রাস পাওয়ার কোন লক্ষণ নেই। একের পর এক থানা, জেলা প্রশাসন করোনার থাবায়। আজ পূর্ব থানায় তো , কাল জেলায়। আজ আক্রান্ত মুখ্যমন্ত্রী র ব্যক্তিগত নিরাপত্তা আধিকারিক। আশন্কা বা পারিপার্শ্বিক সূত্র গুলি বলছে আরো অনেক শীর্ষ আধিকারিকের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা।
সিপাহীজলার দুই শীর্ষ আধিকারিক করোনায় আক্রান্ত। এরা হলেন জেলাশাসক, পুলিশ সুপার। গতকালই খোদ এজিএমসি তে চারজনের করোনায় মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুর খবরে সাধারন্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। এটা খুবই স্বাভাবিক।
কিন্তু কেন আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃত্যুর তালিকা? এই প্রশ্ন কিন্তু উঠছে । আগামী দিনে এইসব প্রশ্ন বাড়বেই। পথঘাটে চলতে গিয়ে এ সব প্রশ্ন কিন্তু কানে আসছে।সাধারণের মুখে তো আর চাপা দেয়া যাবে না।
বলাই বাহুল্য, মহারাষ্ট্র, আমেদাবাদ, দিল্লী, পশ্চিমবঙ্গ সহ আরো দুই রাজ্যে করোনা সংক্রমনের হার যেমন হ্রাস পাচ্ছে তেমনি মৃত্যুর পায়ে বেড়ি পড়ানো গেছে।রাজধানী দিল্লিতেও করোনা সংক্রমন আটকে গেছে। ওই সব জনবহুল এলাকায় সংক্রমন হ্রাস পেলে ত্রিপুরার মত ছোট রাজ্যে কেন থামবে না করোনার পথ চলা?
প্রথমদিকে তো এখানকার ছবি ছিল ভিন্ন। রাজ্য সরকার ও সন্তোষ প্রকাশ করেছিল।
এক সময় ত্রিপুরাকে খোদ মুখ্যমন্ত্রী করোনা মক্ত ঘোষনা করেন। কিন্তু গত এক পক্ষকালে সার্বিক পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, একটা উদ্বেগজনক ছবি ভেসে আসছে এখন। প্রতিদিন বাড়ছেই সংক্রমণ। মৃত্যুর হারও উদ্ধমূখী।কেন এই অবস্থা?আমাদের তিনদিকে বাংলাদেশ। অনুপ্রবেশ তো ঘটছেই। অন্যদিকে পরিযায়ীদের ব্যাপকভাবে ফিরে আসাজনিত পরিস্থিতি। নিয়ন্ত্রণে সরকার যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার হোম কোয়েরানটাইনও ও যথাযথ ভাবে মানা হচ্ছে না বলে সংবাদ ও অভিযোগ। আবার অনেক পরিযায়ী যারা রাজ্যের , তাদের একটি অংশ সড়কপথে রাজ্যে ফিরে এসেছে। এদের ফিরে আসার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়নি। কেননা অসমের সাথে রাজ্যের সীমান্ত প্রায় উন্মুক্ত। শুধু চোরাইবাড়ীতে গেট রয়েছে,যা না থাকার মতো।এসব ভালভাবে কার্যকর থাকলে তো বহিরাজ্য থেকে ফেনসিডিল বোঝাই ট্রাক আসতে পারতো না। তাছাড়া শুরু থেকেই 5:1 অনপাছতে টেস্ট হয়েছে সব এন্ট্রি পয়েন্টে। এমনকি বিমানের যাত্রীদেরও প্রথমদিকে ৫:১ ভিত্তিতে থার্মাল চেকিং করা হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ বাস্তব বহিভূত ছিল বলে অভিযোগ।শুধু তাই নয়, পদ্ধতিও ছিল অবৈজ্ঞানিক।এটা কার মস্তিস্কপ্রসুত সে প্রশ্ন এখন উঠেছে।
রেলপথেও প্রচুর যাত্রী রাজ্যে এসেছে। তাদের ক্ষেত্রেও পরীক্ষা প্রায় না করার সামিল। সেখানে শুধুই থার্মাল চেকিং করা হয়েছে।প্যারাসিটামল খেলে তাপমাত্রা এমনিতেই থাকে না। রেলযাত্রীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এসব খেয়ে জ্বর ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল বলে অভিযোগ।রেলপথে, বিমানপথে, সড়কপথের ত্রিবেনী যোগের মাশুল গুনতে হচ্ছে আজ রাজ্যবাসীকে।এখন তো গোদের উপর বিষফোঁড়া এন্টিজেন পরীক্ষা র প্রাক সমীক্ষা।সমীক্ষক দলকে বহুজায়গায় যেতেই দেয়া হচ্ছে না। এলাকাবাসী সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।এ প্রতিরোধকে কোন অবস্থায় সমর্থন করা যায় না। এতো নিজের কবর নিজের মাটি খোঁড়ার সামিল। রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে সচেতনতা মূলক অভিযান চালায়নি। অভিযান চালালে তো এ অবস্হার উদ্ভব হতোই না।তদোপরি শাসক বিজেপি-আইপিএফটি কে সাংগঠনিক ভাবে অংশগ্রহণ করানো হয়নি।বিরোধীদলগুলিকেও ময়দানে নামাতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
সম্মিলিত ভাবে রাজ্যবাসীকেই করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যেমন গড়ে তুলতে হবে তেমনি জনগনকে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যেতেই হবে। এতো সময়ের দাবি।গতকাল ও আজ কয়েকটি স্হানে যেভাবে সমীক্ষা কর্মীদের বাধা দেয়া হয়েছে তা দেশের কোন অন্চলেই হয়নি।তবে কেন এখানে হবে? এ চলতে থাকলে নিকট ভবিষ্যত খুবই অন্ধকার বলা চলে। একে একে সবাই আক্রান্ত হবে,সময় বলছে সে কথা।