মুখ্যমন্ত্রীর মতে ত্রিপুরায় চাকুরী প্রত্যাশী বেকারের সংখ্যা মাত্র 1.73 লাখ
বিশেষ প্রতিনিধি
মুখ্যমন্ত্রী গত 10 জুলাই আগরতলা টাউন হলে এক অনুস্ঠানে বলেন যে , ত্রিপুরায় বেকারত্বের প্রশ্নে গােটা দেশে ১৭ নম্বর স্থানে রয়েছে । ভারত সরকারের সংস্থা এনএসও এর তথ্য অনুযায়ী ত্রিপুরায় বেকারত্বের হার ৬.৮ শতাংশ । পাশাপাশি ন্যাশনাল ক্যারিয়ার সার্ভিস অনুযায়ী জনসংখ্যার নিরিখে ত্রিপুরায় বেকারত্বের হার ৫ শতাংশ । ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত ত্রিপুরায় বেকারের সংখ্যা ১,৭৩,৫১১ ।
রাজ্যকে স্ব - নির্ভর করে তােলার লক্ষ্যে সরকার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে । রাজ্যে কর্মপ্রত্যাশী বেকার যুবক যুবতীদের স্ব - নির্ভর করে তােলাও সরকারের অন্যতম লক্ষ্য । স্ব - নির্ভর ব্যক্তিই উন্নত রাজ্য গঠনে সক্ষম ।
এদিন আগরতলা টাউন হলে প্রধানমন্ত্রী স্ব - নিধি এবং মুখ্যমন্ত্রী স্ব - নির্ভর যােজনার উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব । নগর উন্নয়ন দপ্তরের উদ্যোগে আয়ােজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন , রাজ্যে স্ব - নির্ভর ব্যক্তির সংখ্যা যত বাড়বে ততই রাজ্য উন্নয়নের পথে অগ্রসর হবে । পাশাপাশি রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নতিও তরান্বিত হবে । মুখ্যমন্ত্রী বলেন , রাজ্যের শহর এলাকায় ২২,৫৫৭ টি তথা ৪৪ শতাংশ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান নিজেদের দ্বারা পরিচালিত । বাকি ৫৬ শতাংশ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ২৯,০৭৪ জন কর্মচারী নিয়ােজিত রয়েছেন । শপস এন্ড এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট ১৯৭০ অনুযায়ী রাজ্যে নথিবদ্ধ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫১,৬২৭ টি । ৮০,৬৯১ টি পরিবার সরাসরি ব্যবসা বানিজ্যের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছে । তাদের ব্যবসার সঙ্গে সাধারণ শ্রমিক পরিবহণ শ্রমিকরাও যুক্ত রয়েছেন । এছাড়াও ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার আরও ছােট দোকানী বিভিন্ন বাজারে ছড়িয়ে রয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন , রাজ্যে শহরাঞ্চলে ৬০,৩৬৯ টি’র বেশি দোকান রয়েছে । এরমধ্যে ২০১৯-২০ সালে ৫১ , ৯৭০ টি ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে । তিনি বলেন , বর্তমানে ট্রেড লাইসেন্সের সরলীকরণ করেছে রাজ্য সরকার ।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন , ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ন্যাশনাল ক্যারিয়ার সার্ভিস এর তথ্য অনুসারে ত্রিপুরায় ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ৫১১ জন নথিভুক্ত চাকুরী প্রত্যাশি রয়েছেন । ত্রিপুরার মােট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ । তিনি বলেন , প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি যেসব প্যাকেজ ঘােষণা করেছেন তার মধ্যে ক্ষুদ্র , ছােট , মাঝারি ( এম এস এম ই ) শিল্পগুলির জন্য ৩ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার সংস্থান রয়েছে । এই এম এস এম ই বা স্ববলম্বন প্রকল্পে ঋণ প্রদানে কোন ধরণের গ্যারান্টি না নেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কগুলিকে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন । তিনি আরও বলেন , ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে ২০১৭-১৮ সালে ২.৪৯ কোটি , ২০১৮-১৯ সালে ২.৭২ কোটি এবং ২০১৯-২০ সালে ৩.০৮ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে । ট্রেড লাইসেন্স সরলীকরণের কারণেই রাজস্ব আদায় বেড়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন । তিনি বলেন , রাজ্যে জি এস টি নিবন্ধীকৃত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৮,৩৫৫ টি । ২০ লক্ষ টাকা টার্নওভার এমন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৯ , ৯৫৬ টি । ২০ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা টার্নওভার এমন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১ , ৪৩২ টি । ৫০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা টার্নওভারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৯২০ টি এবং ১ কোটি টাকার অধিক টার্নওভার এমন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২,০৫৭ টি । মুদ্রা প্রকল্পে রাজ্যে ১৮৪৪.৯৭ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
নতুন ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে যারা ব্যবসায়ে নামবেন তাদের বীমার আওতায় আনার জন্য সরকার প্রয়ােজনীয় উদ্যোগ নেবে । এক্ষেত্রে বীমার প্রথম প্রিমিয়ামের টাকাও সরকার বহন করবে ।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন , আগামী ১৪ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দর থেকে প্রথম ছােট জাহাজ ত্রিপুরার উদ্দেশ্যে রওনা হবে , যা ১৮ জুলাই জলপথে গােমতী নদী হয়ে রাজ্যের সােনামুড়ায় এসে পৌছবে । জলপথে পরিবহণ ব্যবস্থা চালু হলে পরিবহণ ব্যয় অনেকটাই হ্রাস পাবে । রাজ্যের ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটা নতুন যুগের সূচনা হবে । রাজ্যের অথনৈতিক উন্নয়নে গােমতী নদী পথে পরিবহণ ব্যবস্থা একটা উল্লেখযােগ্য ভূমিকা নেবে । এতে কর্মসংস্থানের সুযােগও বাড়বে ।