অনলাইন প্রাইজমানি বয়সভিত্তিক দাবা ১০ জুলাই
নির্মল দাস ( পূর্তদপ্তরের বাস্তুকার)
ত্রিপুরায় এই প্রথম। হতে যাচ্ছে প্রাইজমানি অনলাইন বয়স ভিত্তিক অনলাইন দাবা প্রতিযোগিতা। খুদে দাবাড়ুদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বয়স ভিত্তিক অনলাইন দাবার আসর করার পরিকল্পনা নিয়েছি। ১০ জুলাই (শুক্রবার) রাত ৮ টায় হবে ওই আসর। অনূর্ধ্ব-৭,৯,১১,১৩,১৫,১৭,১৯ এবং ২১ আসর করার পাশাপাশি উন্মুক্ত আসরও হবে ওই দিন। করোনার সংক্রামন রুখতে দেশে লকডাউন শুরু হওয়ার পর ঘরবন্দী মানুষের কথা ভেবে অনলাইন দাবার আসর শুরু করেছিলাম ছোট্ট পরিসরে। তখনও আমি ভাবতে পরিনি ওই আসর রাজ্য ছাড়িয়ে বিদেশে পা রাখবে। মোট ৭৬ দেশের দাবাড়ুরা অংশ নিয়েছে আমার আসরে ভাবলেই অবাক হই এখনও।
করোনা এক নিষ্ঠুর বাস্তবতা। ভাইরাসের সংক্রামনে ঘরবন্দি ছিলো সবাই। লকডাউনের ফলে বাইরে গিয়ে খেলা ওই মুহূর্তে সম্ভব ছিলো না। কিন্তু এই সুযোগে প্রযুক্তির মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে আমি অভিনব উদ্যোগ নিয়েছিলাম । কীভাবে মাথায় আসলো ওই চিন্তাভাবনা, তা নিয়েই বলছি আজ । নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে মোহনপুর স্কুলে যখন পড়তাম তখনই অল্প অল্প করে দাবা খেলা শুরু করি। ছোটবেলার বন্ধু তথা সতীর্থ অনিরুদ্ধ দাসের কাছেই দাবায় হাতেখড়ি আমার। দাবাকে পেশা হিসাবে নেবো ভাবতেই পারিনি ওই সময় পড়াশুনার চাপে। দুই বছর আগে আচমকা দাবা খেলার প্রতি আশক্ত হতে দেখা দেয় শ্রীকৃষ্ণ মিশন স্কুলে পাঠরত আমার ছেলে নিশান্ত দাসকে। প্রথমে দাবা বোর্ড কিনে দিতে অস্বীকার করলেও পরে ওর জেদের চাপে মাথা নত করতে হয় আমাকে। তখন থেকেই আবার আসতে আসতে দাবার প্রতি আশক্ত হতে থাকি আমি। গেলোবছর কলকাতায় জাতীয় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-৭ দাবা প্রতিযোগিতায় ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই দাবা খেলার প্রতি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ি। এর পর থেকেই ছেলের সঙ্গে নিয়মিত অনুশীলন করতে থাকি। এপ্রিল মাসে বেশ কয়েকটি রেটিং এবং রাজ্য আসর হওয়ার কথা ছিলো ত্রিপুরায়। প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু আচমকা করোনা ভাইরাসের সংক্রামনের জেরে সব খেলা বন্ধ হয়ে যায়। ঘরবন্দি হয়ে পড়লো দেশবাশী। তখনই মাথায় আসে কীভাবে ভিনরাজ্যের দাবাড়ুদের অভিভাবকরা দাবা খেলার প্রতি নিজেদের ছেলেমেয়েদের আশক্ত করে। ওই ভাবনা আসতেই রাজ্যের দাবাড়ুদের কথা মাথায় রেখে ঘরবন্দি অবস্থায় অনলাইন দাবা প্রতিযোগিতার চিন্তাভাবনা শুরু করি। ঘরবন্দি থেকেও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে দাবাড়ুরা যাতে নিজেদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে পারে তা মাথায় রেখেই ওই আসরের উদ্যোগ। আর আমার ওই উদ্যোগ নিতে উৎসাহ করে ইন্দ্রনগর স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষিকা তথা আমার স্ত্রী মধুরিমা দাস এবং আমার সাড়ে ৪ বছরের মেয়ে নিলাক্ষী দাস। প্রথমে যথেষ্ট সন্দেহ ছিলো কতটা কার্যকর হবে ওই আসর। কিন্তু যত দিন এগুচ্ছে এর সাফলতা উপলব্ধি করতে পারছি। এন্ট্রি ফি ছাড়া অনলাইনে ৪ রকম দাবা প্রতিযোগিতার আয়োজন করছি লকডাউন চলার সময় প্রতিদিন: বুলেট, ব্লিজ, র্যাপিড এবং ক্লাসিক্যাল। প্রতিদিন দুটি করে আসর হয়েছিলো: দুপুর ১২ টা এবং রাত্রি ৯ টায়। শুধু খেলা নয়, প্রতিদিন খেলার পাশাপাশি মরণব্যাধি করোনা ভাইরাস থেকে কী কী ভাবে মুক্ত পাওয়া যায় এর স্লোগানও দেওয়া হয়েছিলো। আসর যতো এগিয়ে যাচ্ছিলো ততই অভিভাবকদের থেকে অনুরোধ করা হয়েছিলো বয়সভিত্তিক আসর শুরু করার। খুদে দাবাড়ুদের কথা মাথায় রেখে। সকলের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ১০ জুলাই বয়স ভিত্তিক আসর করছি। ওই আসরে প্রতি বিভাগের সেরা ১০ দাবাড়ুদের পুরস্কৃত করা হবে। মোট প্রাইজমানি ৩১৫০ টাকা। ওই আসর সাফল্যের সঙ্গে করতে পারলেই আগামীদিনে আরও অভিনব উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ত্রিপুরার দাবাড়ুদের কয়েকধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য। আসরে অংশ নিতে আগ্রহী দাবাড়ুরা আমার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করতে পারে। যোগাযোগের নম্বর: ৯৪৩৬৫৪৮২৪৩ ।