এন্ট্রি পয়েন্ট গুলিতে নজরদারির অভাবই কাল হয়েছে! প্রাইভেট ল্যাব গুলিতে কভিড টেস্ট নয় কেন প্রশ্ন

প্রদীপ চক্রবর্তী

করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগীদের দ্রুত সনাক্ত করে চিকিৎসা করার জন্য আইসিএমআর প্রতিটি রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে। সেই নির্দেশ এখনো এরাজ্যে পুরোপুরি ভাবে কার্যকর করা হয়নি। বিশেষত করোনা টেস্টিং -এর ব্যাপারে ত্রিপুরা অনেকটাই পিছিয়ে। এখন পর্যন্ত মাত্র ৭০ হাজারের মতো লোকের টেস্ট হয়েছে। তবে বেশী করে টেস্ট কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় কিট রাজ্যে এসে পৌঁছাতে শুরু করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশে বলা হয়েছে, Test-track-treat পদ্ধতি অবলম্বন করে রোগী সনাক্ত করতে হবে। কিন্তু এন্টিজেন টেষ্ট এরাজ্যে এখনো শুরু হয়নি। আর টি-পিসিআরও একমাত্র জিবি হাসপাতালেই করা হচ্ছে। তবে চিকিৎসকের ব্যবস্হাপত্র ছাড়া এই পরীক্ষা করা যাবেনা। যেকেউ ইচ্ছে করলেই এই পরীক্ষা করাতে পারবেনা। জিবি ছাড়াও ধর্মনগরে এই পরীক্ষা করার কথা থাকলেও করা হচ্ছে কিনা খবর নেই। তবে একটা সূত্র বলেছে আরও বেশী ও দ্রুত টেস্ট এর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজ্য ৫০,০০০ হাজার কিটের অর্ডার দিয়েছে। কিন্তু এসে পৌঁছেছে মাত্র পনের হাজার। বলা হচ্ছে বাকী কিট সহসাই এসে পৌছাবে‌। ইতিমধ্যেই এয়ারপোর্ট, রেল স্টেশন, চোরাইবাড়ী ও দামড়া দিয়ে যারা আসেন তাদের জন্য এন্টিজেন টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এখনো রাজ্য সরকার কোভিড পরীক্ষার জন্য আগরতলার বাইরে টেস্ট সেন্টার চালু করতে পারেনি। এমনকি, রাজ্যে বিশেষ করে আগরতলায় বা আগরতলার বাইরে কোন বেসরকারী হাসপাতাল বা প্যাথ‌লজি গুলির সাথেও করোনা টেস্ট সংক্রান্ত ব্যবস্হাপনায় যায়নি। আই এল এস বা লালপ্যাথ এর মতো ল্যাব গুলির পরিকাঠামো রয়েছে। রাজ্য ইচ্ছে করলে আইএল এস, লাল প্যাথ, এস আর এমের সাথে ব্যবস্হাপনায় যেতে পারে। এক্ষেত্রে যেমন সরকারী হাসপাতালে চাপ কমবে তেমনি সনাক্ত করন প্রক্রিয়া দ্রুত হতে পারে।

রাজ্য সরকার কেন এপথে হাঁটছেনা এটা পরিস্কার নয়। তবে এটা ঠিক পরিকাঠামো সম্বলিত ল্যাবগুলিকে কোভিড পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হলে খুব বেশি হলে এক মাসের মধ্যেই সবার পরীক্ষা হয়ে যেতে পারে। এতে রোগী যেমন দ্রুত সনাক্ত হবে, তেমনি প্রাথমিক স্তরেই রোগী চিকিৎসিত হতে পারবে। বেসরকারি ল্যাবগুলিকে কোভিড পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হলে কোভিড জনিত পরিস্থিতি মোকাবিলা আরও সহজ হতো।

তাছাড়া ত্রিপুরায় বাড়ী গিয়ে সুয়াব সংগ্রহ বা স্পট-টেস্টের কোন ব্যবস্থা নেই। শুরুর দিকে পুর কমিশনার এজন্য একটি মোবাইল ভ্যান চালু করেছিলেন। কিন্তু এটি এখন কোথায় কেউ বলতে পারছেননা। উদ্বোধনী ছবি মিডিয়াতে প্রকাশের পর এটি আর চোখে দেখা যায়নি।

তদোপরি রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর ও জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের দুটি ভ্রাম্যমান পরীক্ষাগার রয়েছে। তেমনি রামকৃষ্ণ মিশনেরও একটি অত্যাধুনিক ভ্রাম্যমান মোবাইল পরীক্ষাগার রয়েছে। সরকার এগুলি কাজে লাগাতে পারে। এই ভ্রাম্যমান ভ্যানগুলি বাজারহাট, পার্বত্য অঞ্চলে গিয়ে পরীক্ষা কার্য চালাতে পারে।এতে তো অসুবিধার কিছু নেই, নেই প্রতিবন্ধকতা। এই ভ্যানগুলিকে কাজে লাগাতে কোন ধরনের ঝক্কিও নেই। পশ্চিমবঙ্গ এখন মোবাইল ভ্যান বেশি ব্যবহার করছে। অন্যদিকে দিল্লী, গুজরাট, মহারাষ্ট্রও এই পদ্ধতিতে কাজ করে করোনা রোগী সনাক্তকরন প্রক্রিয়া দ্রুত সমাধান করতে পারছে।

ত্রিপুরা ছোট্ট রাজ্য। জনসংখ্যা ৪৩ লাখ এর বেশী নয়। এখানে কভিড পরীক্ষা, করোনা রোগী সনাক্তকরন , চিকিৎসা খুব সহজেই করা সম্ভব। তার জন্য এন্ট্রি পয়েন্ট গুলিতে শুধু ব্যাপক নজরদারি চালাতে হবে। কিন্তু একাজটাতেই গাফিলতি সবচেয়ে বেশী হচ্ছে। প্রথম থেকেই এন্ট্রি পযেন্ট গু্লিতে সেভাবে সবার সোয়াব সংগ্রহ বা টেস্ট হয়নি। পরিস্থিতি যখন এখন আওতার বাইরে প্রায় এখন ব্যাপক ভাবে এন্টিজেন পদ্ধতি প্রয়োগে পরীক্ষা সহশাই শুরু হবে বলে খবর। কিন্তু এই কাজটাই আগে করা খুব জরুরি ছিল। কিন্তু তখন সব এন্ট্রি পয়েন্ট খোলে রাখা হয়েছে। পাঁচ জনে একজনের সুয়াব সংগ্রহ করা ড়য়েছে। অন্যদের এমনিতেই বাড়ী যেতে দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় এখন রাজ্যে প্রতিদিন সংক্রমন যেভাবে বাড়ছে, তা চলতে থাকলে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে বাধ্য। অবশ্য রাজ্য সরকারও উদ্বিগ্ন রয়েছে। তাই রাজ্য সরকার বিলম্বে হলেও শেষ পর্যন্ত এন্টিজেন্ট টেস্ট শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এরাজ্য এখনো বেসরকারী স্তরেও কভিড পরীক্ষা কেন শুরু করতে চাইছেনা এটা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও বুঝতে পারছেননা। অথচ আইসিএম আরও বলেছে যে, যে কোন স্বীকৃত চিকিৎসকের ব্যবস্হাপত্রেই কোভিড পরীক্ষা করা যাবে। এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকে পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। যে যার মন মত কোভিড পরীক্ষার মূল্য নিতে পারবেনা।তবে এই ব্যবস্হার প্রতি সরকারের নজর অবশ্যই রাখতে হবে। যে কোন এজেন্সি বা ল্যাব তার খুশী মত অর্থ নিতে পারবেনা।

সরকারকে নজর রাখতে হবে পরীক্ষার রিপোর্ট যথাযথ ভাবে আইসিএম আর ডাটাবেস- এ আপলোড করা হচ্ছে কিনা? আপলোড করা বাধ্যতামূলক।

আইসিএমআর রাজ্য গুলিকে চিঠি লিখেই বলেছে যে, তারা এটা লক্ষ্য করছে যে অনেক ক্ষেত্রেই বেসরকারি ল্যাবগুলি তথ্য আপলোড করছে না। নীতি নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, বেসরকারী স্তরে এই পরীক্ষা পর্বের আগে যথেষ্ট প্রচারনা চালাতে হবে। এই প্রচার নানাভাবে হতে পারে। এছাড়া, সরকার আশা কর্মীদের কাজে লাগাতে পারে। এরা মূলতঃ নানা তথ্য সংগ্রহ করবে। কিন্তু ত্রিপুরাতে আইসিএম আর -এর গাইডলাইনের এসব বহু কিছুই মানা হচ্ছেনা বলে চিকিৎসকদেরই একটি অংশ বলতে শুরু করেছেন।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.