বহুপদ শূন্য, শিক্ষক নিয়োগে রাজ্য সরকারের অনীহা কেন প্রশ্ন !
বিশেষ প্রতিনিধি
10323 শিক্ষকের চাকুরি চ্যুতির পর রাজ্যের সাড়ে চার হাজারের বেশী স্কুলের মধ্যে প্রায় ২৫০ টি স্কুল প্রায় শিক্ষক শূন্য। কোথাও একজন শিক্ষক তো কোন স্কুলে দুই জন শিক্ষক। ১০৩২৩ শিক্ষক যখন স্কুল থেকে বিদায় নিয়েছিলেন তখন লকডাউনের কারণে স্কুলগুলি বন্ধ ছিল। ফলে শিক্ষক সংকটের সমষ্যাটা প্রকাশ পায়নি । কিন্তু স্কুল গুলি খুললেই রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় দেখা দিবে ব্যপক সংকট। এরূপ অবস্থায় রাজ্য সরকারের প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে শিক্ষক নিয়োগ করার। কিন্তু টেট পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে বসে রয়েছেন এমন 1800 হবু শিক্ষক অফারের আশায় দিন গুনছেন। কিন্তু শিক্ষা দপ্তর নিরব। প্রসংগত, এই শিক্ষক স্বল্পতার অজুহাতে রাজ্য সরকার কেন্দ্র থেকে এককালীন বিএড ছাড় এনে টেট পরিক্ষা নিয়েছিল। কিন্তু লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে ঐ টেট পরিক্ষায় উত্তীর্ণ 1184 প্রার্থীদের নিয়োগের কোন পদক্ষেপই এখনো গ্রহণ করেনি সরকার। তাছাড়া ২০১৮ সালে যারা টেট উত্তির্ণ হয়েছিল তারাও এখনো নিয়োগের আশায় শিক্ষামন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছেন। ২০১৮ সালে এক ভাষনে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন রাজ্যে প্রায় ১৪০০০ শিক্ষক পদ খালি আছে। কিন্তু তিনি নিয়োগ করার লোক পাচ্ছেন না। তারপর ১০৩২৩ শিক্ষক পদ খালি হবার পর রাজ্যে মোটামুটি শিক্ষকদের শূন্যপদ দাঁড়ায় ২২,৫০০ (১৪০০০+৮৫০০)। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘটনা ঠিক তার উল্টো। রাজ্যে বর্তমানে প্রায় ১৮০০ টেট উত্তির্ণ বেকার রয়েছে। অনেকের আবার টেট উত্তির্ণ হবার দুই বছর হয়ে গিয়েছে। অনেকের চাকরির বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। আবার যাদের বিএড, ডিএল এড নেই তাদের মেয়াদ শেষ হবার মাত্র ৮ মাস রয়ে গিয়েছে। কিন্তু সরকারের তদের নিয়োগের কোন পরিকল্পনাই নেই। জানাগেছে, রাজ্যে বর্তমানে প্রায় ৪০০০ বি. এড প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বেকার রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে STGT পরিক্ষা নেবার জন্য দাবি জানাচ্ছেন। অবশেষে শিক্ষামন্ত্রী STGT নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু তিনি যে পদের সংখ্যা উল্লেখ করেছেন তা সিন্ধুতে এক বিন্দু জলের সমান। শিক্ষামন্ত্রী মাত্র ১৭৫ টি শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য STGT পরিক্ষা নেওয়ার কথা বলেছেন। যা শুনে হতাশয় ভেঙে পড়েছেন বি. এড প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বেকাররা। কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ নয়।শিক্ষা ভবনের অভ্যন্তরীণ সূত্রের খবর অনুসারে, শিক্ষামন্ত্রী যে ১৭৫ টি পদের কথা উল্লেখ করেছেন তাতে জেনারেল ক্যাটাগরির প্রার্থীদের জন্য একটিও আসন নেই। আসলে এই পদগুলি গতবছরের সৃষ্টি। ২০১৯ সালে শিক্ষাদপ্তর মোট ৬২৫ জন শিক্ষক পদের জন্য STGT পরিক্ষা সংঘটিত করেছিল। তার মধ্যে ৪৫০ জন প্রার্থী নিয়োগ হয়েছে। বাকি ১৭৫ টি পদ খালি রয়ে গিয়েছিল। ঐ পদগুলির জন্যই এবছর আবার নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলে ঠিক হয়েছে।
জানাগেছে, ২০১৯ সালের ১৭৫ টি পদের মধ্যে - SC প্রার্থীদের জন্য শূন্যপদের সংখ্যা ছিল ০৩ টি।
ST প্রার্থীদের জন্য শূন্যপদ ছিল ১৪৪ টি । এবং
PH প্রার্থীদের জন্য শূন্যপদ ছিল ১৫ টি এবং
ESM প্রার্থীদের জন্য শূন্যপদ ছিল ১৩ টি। যেহেতু জেনারেল ক্যাটাগরির প্রার্থীদের জন্য কোন শূন্যপদ গতবছর খালি ছিলনা, তাই এবছর STGT পরিক্ষায় তাদের জন্য কোন পদ না থাকার সম্ভাবনাই বেশী। অর্থাৎ রাজ্যে সরকার ২০২০ সালের জন্য নতুন করে কোন পদ সৃষ্টিই করেনি। এমত অবস্থায় রাজ্যে শিক্ষাবিপ্লব কতটা বাস্তবায়িত হবে তা যথেষ্ট সন্দেহের সৃস্টি করেছে। তবে এটা শিক্ষা ভবনের শিক্ষা বিশেষজ্ঞরাও স্বীকার করেন যে লকডাউনের পর স্কুল শুরু হলেই শিক্ষক স্বল্পতার কায়নে একটা ব্যপক ঝামেলা শুরু হবে।