কৃষ্ণ কথার অন্যকথা আলোকে 'শ্রীকৃষ্ণের শেষ কটা দিন '
সৌম্যদীপ দেব
মানুষ মাত্রেই ভগবান কেউ সাধারণ নয়। নিজের মধ্যে থাকা প্রতিভার প্রকাশ সময়ের সাথে বিষয়ের পাশে ঘটে। সে যে কোনো দিকেই হতে পারে - মন্দ বা ভালো বিচার করার জন্যই তো এতো এতো চর্চা ও চর্যা।
কৃষ্ণ কথা নিয়ে বইয়ের সন্ধান করলে বহু গ্রন্থের উল্লেখ পাওয়া যায় - তা সকলেই অল্পবিস্তর বিদিত আছেন।
তিনি ভগবান। তাও কেমন ছিল এই লোকারণ্য দেবতার জীবনের শেষ কিছু দিন?
'মহাভারতে' র কৃষ্ণ কথার সমৃদ্ধ পরিসরকে পরবর্তীতে অনেক লেখক,গবেষক, আলোচক, পাঠক নানা ভাবে তাঁদের সৃষ্টিতে তুলে এনেছেন।
ঠিক এই রকমই অত্যন্ত সুচারু ও সৌষ্ঠব ভঙ্গিতে তুলে এনেছেন ঔপন্যাসিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়।
কৌরব ও পান্ডব কুলের সাথে কৃষ্ণের বার বার নানা ভাবে দেখা হয়েছে। ভগবান হয়েও ছলাকলায় কৃষ্ণের সমস্পর্ষী মহাভারত অঙ্গনে দ্বিতীয় জন পাওয়া দায়!
একই দেহে এতো এতো নব রূপের সাজ তা মুরলী মনোহরেরই মানায়।
তবে কৃষ্ণ কথাকে নতুন ভাব,ভঙ্গি,প্রকাশের বিষয় নির্বাচন ও অভিনবত্বে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বিশেষ পারদর্শীতা দেখিয়েছেন।
দ্রৌপদীর জন্ম বৃওান্ত, পান্ডবদের সাথে পাঞ্চালের নানা দিক ও কৃষ্ণ - হ্যাঁ কৃষ্ণ অবতারের নানা খুঁটিনাটি তথ্য ' শ্রীকৃষ্ণের শেষ কটা দিন' উপন্যাসটিকে এক অনন্য মাত্রা দিয়েছে।
প্রচলিত কৃষ্ণ কথার বাইরে গিয়ে লেখনী দক্ষতার বলে এক নতুন ভাবে জনার্দনকে তুলে আনলেন - পাঠক কুলের দরবারে।
ইন্দ্রপ্রস্থ থেকে হস্তিনাপুর কোনো জায়গাই তিনি বাদ রাখেননি। কৃষ্ণময় ভারতবাসীর কাছে এই উপন্যাস নিশ্চয়ই এক বিশেষ প্রাপ্তি।
দুর্যোধনের কারণে কুরু বংশের বিনাশের কথা জানান দিয়ে তিনি গেছেন কলির বর্ণনায়।
যেখানে সবই আছে শুধু সত্য ধর্ম উধাও। সেখানেও ভগবান বাস করেন।
এই কলিতেই হয়তো এক হাতে নেশা বস্তু আর হৃদয়ে আপনার উপস্থিতি।
ধর্মকে জটিলতা মুক্ত করলেন, চৈতন্য অবতারে তা আরও সহজ ভাবে লভ্য হল জীবকুলে।
একটা খেলা কি করে একটা রাজার পতন ঘটাতে পারে তার নিরাভরণ চিত্র প্রস্তুত করে, আপনি পান্ডবদের বনবাস দিলেন।
তেরো বছর পরে উভয়ে আবার মুখোমুখি হবে সেই রণাঙ্গনে।
প্রত্যক্ষে যুদ্ধ আপনি করেননি। দুষ্কৃতির বিনাশ ও সাধুদের পরিত্রাণ আপনার মূল।
যুগে যুগে এই দুই পক্ষকে কালের সীমানা টেনে আপনি রক্ষক ও ভক্ষক হয়েছেন।
এই করে করে কাহিনির নানা আবহে ঔপন্যাসিক এনেছেন কৃষ্ণের স্বপ্নের নগরী দ্বারকার নির্মাণ কথা।
কি অপরূপ বর্ণনা তা অবর্ণনীয়। এখানে যেন কৃষ্ণ এক প্রকৌশলী।
আপনার মহিষীগণের সংখ্যা দেখে অনেক রাজাই হয়তো অচৈতন্য হয়ে যেতে পারেন - তাও সকলের ঘরে আপনি। এ তো খেলার নামে এক অপার লীলা।
তাও নারী ও পুরুষের মধ্যেকার লঘু চপলতা ছাড়িয়ে এক উচ্চমানের সম্পর্কের স্থাপক আপনিই।
গৃহী কৃষক হিসাবে উপন্যাসে অল্প কিছু কথা বলে কাহিনি বাঁক নিলো কুরু যুদ্ধ পার হয়ে ভীষ্মের উওরায়ণের দিকে।
জ্ঞান ভান্ডার গঙ্গা পুত্র ভীষ্ম বিদায় নিচ্ছেন।
পান্ডব বংশের উওরাধিকার থাকতে হবে তাই মৃত পরীক্ষিৎকে জীবিত করলেন।
একে একে এবার ব্রক্ষ্মশাপে যাদব কুলের চিত্র আখেরে তো এই ধ্বংসের মূলে কৃষ্ণ স্বয়ং। তিনি নিজে নিজ কুলের বিনাশ করলেন।
এরপরই এলো মুষলের কথা।
কি থেকে কি রূপ নিলো - প্রভু অন্তর্যামী।
নিজের চোখে দেখছের মর্তের অমরাবতীর ধ্বংস লীলা।
প্রভু তোমার বিদায় কথা শ্রবণে এলো। যাবে কই লীলাময়, এই চরাচর ছেড়ে।
তোমার বংশ পরম্পরার কেউই নেই, সবাই সময়ের নিয়মে বিগত।শুধু তুমি রয়েছো অশ্বত্থের তলায় বসে।
মনে পরলো গান্ধারীর অভিশাপ ফলছে - তোমাকেও যেতে হবে।
আপনার পদকে হরিণের মুখ সদৃশ ভেবে মুষল যুক্ত জরার তীরে বিদ্ধ হতেই আর কিবা থাকে।
দ্বারকা সমুদ্রের গ্রাসে যাবে তা আপনি জানেন।
সকল ভগবানেরা এসেছেন ভগবানের নির্বাণ দেখতে।
পদ্মনেত্রদ্বয় নিমীলিত নেই। সমুদ্র তীরেই অবস্থান করলেন চিরকালের তরে।
বিষয়ের ভারে লেখাটি গম্ভীর, আর সে জন্য হয়তো কৃষ্ণ কথার প্রচলিত রস এখানে পাবেন না। তবে নব কৃষ্ণ কথার একটা দিক সূচক। #
সৌম্যদীপ দেব
উওর-পূর্বের উপন্যাস গবেষক
আগরতলা, ত্রিপুরা।