রক্তাক্ত রক্তদাতা, হায় রাম! তুমি কোথায়? রামরাজত্বে কলঙ্কিত সভ্যতা!
প্রদীপ চক্রবর্তী
ওরা তো নিজের জন্য করছে না, করছে সমাজের জন্য। যাদের রক্তের প্রয়োজন তাদের জন্য। রক্ত দান মহৎ দান।সংগ্রহীত রক্ত অন্যের জীবনের জন্য লাগবে। মহৎ রক্তদান শিবিরের জন্য আয়োজন করে ওরা আক্রান্ত হল। হাসপাতালে ভর্তি করা হল আক্রান্তদের। গত কদিনে এমন বেশ কয়েকটি হামলা হুজ্জুতির ঘটনা ঘটল। স্তম্ভিত হতে হল সভ্যসমাজকে।
দেশের অন্য কোথাও এভাবে রক্ত দান শিবিরে হামলা হয়েছে কিনা জানা নেই। কিন্তু এধরনের হামলা হুজ্জুতি হলে ভবিষ্যতে কেউ রক্তদানে এগিয়ে আসবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ সংশয় রয়েছে। বর্তমানে
অদ্ভুত এক পরিস্থিতিতে আছে গোটা এ সমাজ, সভ্যতা। এমনিতেই মানব সভ্যতা অস্তিত্বের সংকটে। স্তব্দ হয়ে গেছে জীবনের জয়গান। আমরা তো চলতে চলতে থেমে গেছি, বলতে বলতে ভূলে গেছি। সর্বত্র এক অদ্ভুত অনিশ্চয়তা। বেঁচে থাকার গ্যারান্টি নেই। কখন করোনা দুমড়ে মুচড়ে দেহটা ছূড়ে ফেলে দেবে তাও বলা যাচ্ছে না।সবাই ঘর বন্দী। চাকরি করতে যেতে হয় গুজরাট, পুনে , দিল্লীতে। সেখানেও এখনো ত্রিপুরার বহু লোক গৃহবন্দি। এক বেলা খেতে হয়।তাও আবার যা পাওয়া যায় তাই।ঘড়ে বসেই অফিসের কাজ করতে হয়। দিনের পর দিন একা ফ্লাটে থাকা। একা একা গান শোনা, ফিল্ম দেখা। হাসি , ঠাট্টা, গল্প করার কেউ নেই। একাকীত্ব যে কিসব ডেকে আনছে তা বলতে পারবে ভবিষ্যৎ।ভিডিও কলিং-এ কিন্তু একাকীত্ব কাটেনা। মনস্তাত্ত্বিকবিদরাই এসব বলছেন। কিন্তু করোনার কল্যানে এখন সব অসম্ভব সম্ভব হচ্ছে। মানে সম্ভব করতেই হচ্ছে।
সর্বত্রই অন্যান্য চিকিৎসা সংকট।করোনা ছাড়া অন্যান্য চিকিৎসা প্রায় হচ্ছে না। সামান্য সর্দি, কাশির অষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া যাচ্ছে না চিকিৎসা।হাসপাতালে যাওয়াটাই এখন কঠিন ব্যাপার। চিকিৎসা করবে কে? চিকিৎসক, নার্স তো কভিড চিকিৎসায় ব্যস্ত।তবু কিছু কিছু চিকিৎসা চলছে।
এদিকে ব্লাডব্যান্কে রক্ত নেই। রক্তের জন্য নানা জনকে নানাস্হানে ছুটতে হচ্ছে। এত সহজ তো নয় যে রক্ত দেয়ার জন্য কেউ বসে আছে। ফলে আবার হাসপাতালে হাসপাতালে রক্তব্যবসা শুরু হয়েছে। সক্রিয় দালাল চক্র। এঁরা হাসপাতাল চত্বরে ঘুরঘুর করে, মক্কেল খোঁজে,৫/১০ হাজারে রক্ত বিক্রি করে। মাঝখানে এসব চক্র ছিলনা।দালাল চক্র নির্মূল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন আবার সব ফিরে এসেছে।
ব্লাডব্যান্ক রক্তশূন্য। শুন্যতা কাটাতে নানা দল, সংস্হা উদ্যোগ নিয়েছে। শিবিরে রক্ত দেয়া চলছে। সম্ভবত মুখ্যমন্ত্রীও রক্তদান করেছেন।অন্যকোন মন্ত্রী রক্ত দিয়েছেন বলে জানা নেই।বলি শিক্ষা মন্ত্রী কি রক্ত দিয়েছেন? না দেন নি বলে সংবাদ। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া আর কোন কোন মন্ত্রী রক্ত দান করেছেন?
এই পরিস্থিতিতে রক্তের অভাব মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে বামপন্থী ছাত্র ও যুব সংগঠন। কিন্তু শিবির করতে গিয়ে রামনগরে এরা আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল বিলোনিয়ায় ওরা আক্রান্ত হয়েছে।
অভিযোগ পুলিশ ছিল, দারোগা বাবু ছিল । কিন্তু তাদের সামনেই ওঁরা আক্রান্ত হয়েছে। সম্ভবত ওরা ঠুলি পড়া ছিল, নয় ওদের লাঠি গুলিতে পোকা ধরা ছিল।না হলে তো ওদের ব্যবস্হা নেয়ার কথা। নেয়নি। প্রশাসনও জগন্নাথ হয়ে আছে। দেখেও যারা না দেখার ভান করে থাকে তাদের কাছ থেকে বেশী কিছু আশা করা বাতুলতা মাত্র।
এভাবে যদি একেরপর এক ঘটনা চলতেই থাকে তাহলে তো নিকট ভবিষ্যতেই বহিরাজ্য থেকে রক্ত আমদানি করতে হতে পারে।অথচ একসময় আমরা অন্য রাজ্যকে রক্ত সরবরাহ করেছি।