খবর আটকাতে নিত্যনতুন সার্কুলার, সরকার ঘনিষ্ঠ মিডিয়ার সাথেও ক্রমেই দূরত্ব বাড়ছে সরকারের

প্রদীপ চক্রবর্তী

রাজ্য সরকারের সাথে সরকার ঘনিষ্ঠ কিছু সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের একটি অংশের সম্পর্ক অবনতির দিকেই যাচ্ছে। মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল। সার্বিক গতিপ্রকৃতি ও পারিপার্শ্বিক ঘটনা প্রবাহ কিন্তু অন্তত সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। এত দ্রুত সম্পর্কে চিড় ধরবে তা হয়তো ভাবাই যায়নি বা কেউ ভাবতেও পারেনি। সম্ভবত মুখ্যমন্ত্রীও কল্পনা করতে পারেননি এই অবনতির কথা।

কিন্তু কেন এই তিক্ততার সুত্রপাত?

বেশী পেছন ফিরে তাকানোর দরকার নেই। এই ধরুন গত ২ জুন ২০২০ এর নির্দেশনামার কথা। সার্কুলার জারী করা হয়েছে যে এজিএমসি-র কেউ সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে পারবেনা। পারবেন না কোন তথ্য দিতে। প্রশ্ন উঠেছে এ আবার কেমন নির্দেশ? কেননা সাংবাদিকরা জনসাধারণের জানার জন্যই তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। সেই তথ্যের জন্যই ওরা এজিএমসি তে গিয়ে থাকে। কিন্তু নুতন সার্কুলারে তো এখন সাংবাদিকদের পক্ষে সরকারী ভাষ্য জানাই সম্ভব হবে না। পাঠকরাও সরকারী বক্তব্য জানতে পারবে না। এতে একটি বিভ্রান্তি সৃষ্টির অবকাশ রয়েছে।

এই সার্কুলারের আগে রাজ্য প্রশাসন থেকে অন্য এক সার্কুলারে বলা হয় সচিব পর্যায়ের আধিকারিক ছাড়া কেউ সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে পারবেনা। পুলিশের তরফে পুলিশ সুপার ছাড়া অন্য কোন অফিসার কোন অফিসিয়াল ভার্সন দিতে পারবেন না।

কিন্তু প্রশ্ন হল কোন ঘটনা ঘটলে থানা পর্যায়ের অফিসাররা কিছু না বললে সাংবাদিকরা খবর পাবে কিভাবে? কিন্তু নয়া এসব সার্কুলারের কারনে কেউ কিছু বলতে বা জানাতে পারছেন না। পুলিশ সুপার তো আর বসে থাকেন না সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়ার জন্য। ফলে সংবাদ এক তরফাই হয়ে থাকে। কনভেনশন অনুযায়ী সরকারী ভার্সন অনেকটাই বাধ্যতামূলক। মোবাইলে কথা বলার চেষ্টা করলেও সচিবরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মোবাইল ধরেন না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার অনুগত সাংবাদিকদের ফোন ধরে থাকেন বলে প্রকাশ। কিন্তু সরকারের সমালোচনা করলেই বিপদ।

কোন একটি প্রভাতী দৈনিক সংবাদপত্র সরকারের সমালোচনায় মুখর হতেই কিছুদিন আগে কোন এক রাতে পুলিশ ওই সংবাদপত্রের অফিসে অভিযান চালায়। কেন হঠাৎ করে এই অভিযান তা এখনো জানা যায়নি। যদিও মুখ্যমন্ত্রী নাকি এ সম্পর্কে রিপোর্ট তলব করেছিলেন বলে একটি বৈদ্যুতিন মাধ্যম সংবাদ সম্প্রচার করেছিল। পুলিশ কি রিপোর্ট দিয়েছে বা আদৌ রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে কিনা তাও জানা যায়নি। নির্বাচনের আগে বা পরেও কিন্তু বিপ্লব বাবু ওই সম্পাদকের বাড়ীতে মাঝে মধ্যে যেতেন।

সংবাদপত্র গঠনমূলক সমালোচনা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু হঠাৎ করে ওই কাগজ এর বিরুদ্ধে সরকার কেন আক্রমনাত্মক হয়ে উঠল তা নিয়ে এখন নানা মহলে জল্পনা। এই আলোচনা অবশ্য সংবাদপত্র ও সাংবাদিক মহলেই বেশী কেন্দ্রীভূত। তবে সংবাদপত্র ও শাসকের মধ্যে মধুর সম্পর্ক বেশি দিন থাকেনা। অন্তত ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহের তথ্যতল্লাশ করলে তাই ভেসে উঠে। তবে নানা সূত্রে নানা খবর হলো এখন আর আগের মত সেই সমধুর সম্পর্ক নেই অনেক মিডিয়ার সাথেই। থাকতেও পারেনা। কেননা শাসক তার মতো কাজ করবে, দলের হুইপে তাকে সরকার চালাতে হবে অর্থাৎ সরকার পরিচালনা করতে হবে। এ রাজ্যের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নেই বা থাকতেও পারেনা।

নয়া সরকার এর সাথে খুব তাড়াতাড়ি মিডিয়ার সম্পর্কে চিড় ধরেছে। খবর হল বেশ কয়েকটি মিডিয়ার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই এফ আই আর দাখিল হয়েছে। সরকার এফ আই আর দাখিল করতেই পারে যদি সরকার তা মনে করে। ক্যাবল টিভি, সংবাদপত্র বা নিউজ পোর্টালও তার নীতি, উদ্দেশ্য কে সামনে রেখেই সংবাদ রচনা করে থাকে। শাসক বরাবরই তাঁবেদারদের আমল দিয়ে থাকে বা পছন্দ করে। এটা গোটা দুনিয়া জুড়েই, শুধু এরাজ্য বা এদেশে নয়।

তবে মনে রাখতে হবে বা ভূলে গেলে চলবে না গনতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদপত্র। টিভি, সংবাদপত্র বা নিউজ পোর্টাল ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেবে, সরকারকে দিশা দেখাবে।সরকার যদি শিক্ষা নেয় তাহলে জনসাধারণের ভালো, অন্যথায় জনগন হবে ক্ষুব্ধ।

সবশেষে বলা যেতে পারে এ রাজ্যে বিজেপি-র জোট সরকার হয়েছে মাত্র দু'বছর। এখনই তার ভালমন্দ বিচারের সময় সম্ভবত আসেনি। তাঁকে আরো সময় দিতেই হবে। তার অর্থ এই নয় মন্দকে মন্দ বলা যাবেনা, ভালকে ভাল বলা যাবেনা।

তবে এ রাজ্যের ক্ষেত্রে এমন দু-তিন জন বার্তাজীবি রয়েছেন যারা দিনে দিনে ফুলেফেঁপে কলাগাছ হয়ে গেছেন, এর নাম ওর নাম করে নানা সুবিধা আদায় করে নিয়েছে বা নিচ্ছেন। এদের সম্পর্কে কিন্তু সরকার প্রধানকে সতর্ক থাকতেই হবে। এ রাজ্যে এমন কজন আছেন যারা পেশার নাম করে দিনের কয়েক ঘণ্টা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা আবাসে কাটিয়ে উদ্দেশ্য নাকি হাসিল করে নিচ্ছেন। এক বার্তাজীবির তো ব্যাগ বহন করতে করতে দম বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলেও নিজের স্বার্থ রক্ষায় একশ শতাংশ সফল।

অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই প্রতিবেদন লেখা হলেও নানা ঝামেলার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

কিন্তু কেন এই প্রতিবেদন? প্রতিবেদক তার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে মনে করছে এখনই সময় সতর্ক করে দেওয়ার। কারন মুখ্যমন্ত্রী আন্তরিকভাবেই চাইছেন এরাজ্য ও রাজ্যবাসীর সর্বাঙ্গীন উন্নতি। দিনভর তিনি নানাপ্রান্ত সফর করছেন। ক্লান্তি নেই। উনার নিজের ভাষায় রাত একটা দুটা পর্যন্ত তিনি নিত্যদিন কাজ করে থাকেন। আবার ভোরে বেড়িয়ে পড়েন। আন্তরিকতা না থাকলে তা হতেই পারে না।

তবে মনে হয় শুধু সমালোচনা নয় প্রশংসা ও প্রয়োজন। কেননা আধুনিক সাংবাদিকতায় ভালো সংবাদ বা প্রতিবেদন কিন্তু পাঠকরা প্রত্যাশা করেন।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.