১৫ জুন থেকে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত কিন্তু ভয়াবহ হতে পারে

প্রদীপ চক্রবর্তী

রাজ্যে করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা যখন দিন দিন বেড়েই চলেছে ঠিক তখনই রাজ্য সরকার এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা স্পর্শকাতর ও বিতর্কিত। প্রশ্ন উঠেছে রাজ্য সরকার কিসের উপর ভিত্তি করে ক্রান্তিকালে স্কুল গুলি খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কচিকাঁচারা কি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারবে? যেখানে রাজ্যের অধিকাংশ বাজার হাট পরিবহনেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না?

রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আগামী ১৫ ই জুন থেকে স্কুলগুলি খোলা হবে অর্থাৎ পঠনপাঠন শুরু হবে। এর প্রস্তূতি হিসাবে শিক্ষক শিক্ষিকাদের ১ লা জুন থেকে স্কুলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রকাশ, অকথিত ভাবে বলা হয়েছে শিক্ষার কাজে নিযুক্তদের ১ লা জুন থেকে স্কুলের শ্রেনীকক্ষ গুলি সেনিটাইজ করতে হবে এবং বেন্চ গুলি এমন ভাবে বসাতে হবে যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে।

এ সব কাজ তো শিক্ষক শিক্ষিকাদের নয়। এঁরা পঠনপাঠন করাবে এবং শিক্ষার মান বজায় রাখবে। অন্তত তাই সাধারণ মানুষ জানেন। এখানে হঠাৎ করে কার মাথায় আজগুবি এসব চিন্তা কিভাবে এল তাই প্রশ্ন। এমনিতেই শিক্ষক শিক্ষিকাদের দিয়ে গত দু'বছর এমন সব কিছু কাজ করানো হয়েছে তা তাঁরা করতে বাধ্য নন। এদের ছুটিছাটাও বাতিল করে দেয়া হয়েছে।শ্রম আইন অনুযায়ী রবিবার অফিস, কাছাড়ী সব বন্ধ। কিন্তু এরাজ্যে এদের রবিবারের ছুটিও বাতিল করে দিয়েছিলেন। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা মুখবুজে সব সহ্য করেছেন। এবার সরকারের বদান্যতায় সেনিটাইজ ও তাদের করতে হবে। দূ্র্ভাগ্য শিক্ষক সমাজের। আরো দূর্ভাগ্য এ রাজ্যে যখন করোনা গ্রাফ ক্রমবর্ধমান তখনই কচিকাঁচা পড়ুয়াদের স্কুলে যেতে বলা হচ্ছে।এতে তো এদের মধ্যে সংক্রমনের ঝুঁকি বেড়েই যাবে। তদোপরি পড়ুয়াদের স্কুলে পাঠিয়ে কি অভিভাবকরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন? দূর্ভাগ্যবশত যদি কোন পড়ুয়া আক্রান্ত হয়ে যায় তার দায়িত্ব কে নেবে? শিক্ষা দপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রী, রাজ্যসরকার? তখনতো এঁরা দায়ভার কোন অবস্থায় এড়াতে পারবেন না।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ জনিত কারণে যখন গোটা বিশ্বে উদ্বেগ তখন এ রাজ্যে কিছু অভাবিত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যাতে সংক্রমনের আশন্কা রয়েছে।যেমন বহিরাজ্য যারা আসছেন তাদের থার্মাল চেকিং করে বাড়ী পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এদের হোম কোয়ারেনটাইনে থাকতে বলা হচ্ছে। এঁরা ও দিব্যি বাড়ীতে যাচ্ছেন, ঘুরে বেড়াচ্ছেন, নানাজনের সাথে নানাভাবে মিশছেন। ইতিমধ্যেই এমন কয়েকহাজার বাড়ী গেছে।লালারস পরীক্ষার পর সনাক্ত হলে এদের ডেকে এনে কোয়ারেনটাইন করা হচ্ছে। যারা সনাক্ত হচ্ছেন তারাতো নানাজনের সাথে মিশে সংক্রমনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ট্রেন যাত্রীদের পাঁচ জনের মধ্যে একজনের লালারস পরীক্ষা করা হচ্ছে। কয়েকজন চিকিৎসক বলেছেন সবট্রেন যাত্রীদেরই কোয়েরেনটাইনে রেখে লালারহ পরীক্ষা করা প্রয়োজন। পরীক্ষার পর নেগেটিভ রিপোর্ট এলে পরে তাদের ছেড়ে দেয়া যেতেই পারে। এবং এক্ষেত্রে সংক্রমনের ঝুঁকি ও থাকছে না। ত্রিপুরার প্রবেশ দ্বার চোরাইবাড়ীতেও করা তাই।

এদিকে কোয়েরেনটাইন সেন্টার গুলিতে পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে।এইসব সমস্যা অবিলম্বে নিরসন করে পরিকাঠামো দৃঢ় করা জরুরী। খাবার বিলি নিয়েও বিস্তর অভিযোগ । তেমনি টেষ্টিং কিটও বেশী বেশী করে রাখা প্রয়োজন। পরীক্ষা করতে গেলেই এসবের প্রয়োজন। কিটের মজুত কেমন তা জানা না থাকলেও এটা বলা যেতেই পারে মজুত না থাকলে এসব আনা যেতেই পারে। অর্থের তো সমস্যা নেই। কেন্দ্র যেমন অর্থ দিয়েছে তেমনি রাজ্যের হাতেও রয়েছে প্রচূর অর্থ।মুখ্যমন্ত্রীর তহবিলে সবাই টাকা দিচ্ছে। তবে ট্রেনযাত্রীদের কিন্তু লালারস পরীক্ষার রিপোর্ট না পেয়ে তাদের ছেড়ে দেয়ার প্রশ্নই উঠতে পারেনা বলে চিকিৎসকরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। উদ্বেগের কারন হল গতকাল এগারজনের এবং আজ দশজনের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। করোনা গ্রাফ রাজ্যে বেড়েই চলেছে।এমন দিন যাচ্ছে না যেদিন কেউ না কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন না।সামগ্রিক বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করে দেখা প্রয়োজন।

এ মুহূর্তে স্কুল খোলার অর্থ কিন্তু রাজ্যের কাছে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার সামিল হতে পারে।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.