করোনা রিলিফ প্যকেজ, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষনা ও লকডাউনের বাস্তব

তাপস দে

করোনা মোকাবিলায় গত ২৪ মার্চ দুপুর ২টা থেকে ত্রিপুরায় কমপ্লিট লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে এবং তা চলবে আগামী ৩১ মে ২০২০ পর্যন্ত। রাজ্যে লকডাউন ঘোষণার প্রথম দিনই মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের সর্বস্তরের গরীব মানুষের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে তাদের জন্য কিছু বিশেষ সাহায্য ও আগাম রেশন সামগ্রী প্রদানের ঘোষনা দেন। একই সাথে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ত্রিপুরার বর্ডার এলাকায় কোনভাবেই কোন বাংলাদেশীকে আসতে দেওয়া হবে না। কিন্তু দেখা গেল বর্ডারে বিএস এফ-ই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত । এখন পর্যন্ত যে ১৫৪ জন করোনা রোগী ত্রিপুরায় পাওয়া গেছে তার মধ্যে বি এস এফ জওয়ানের সংখ্যা ১৫০(১১ মে, ২০২০ পর্যন্ত)।

অথচ, ২৩ মার্চ লকডাউন ঘোষণার তিন দিন পরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, আগামী এক মাসের জন্যে বর্ডার এলাকায় কার্ফু বলবত থাকবে। যদি কেউ কোন বাংলাদেশীর উপস্থিতির তথ্য জেনেও পুলিশ বা প্রশাসনকে না জানান তাহলে ঐ ব্যাক্তি বা পরিবারের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। এব্যাপারে স্থানীয় প্রধান উপপ্রধান এবং পুলিশকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করতে তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্ত মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা অনুযায়ী এই কাজগুলি কতটা হচ্ছে বা স্থানীয় প্রধান উপপ্রধান এবং বিএসএফ ও টিএসআর ও পুলিশকে দিয়ে বাংলাদেশীদের যাতায়াত কতটা বন্ধ করানো গেছে তা সবাই দেখছেন।

এর আগে লকডাউন ঘোষণার দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ফ্রি রেশনিং-এর ব্যবস্থা করা হবে গ্রামের সব গরীব মানুষের জন্যে। এক্ষেত্রে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত প্রায়োরেটি ও অন্ত্যোদ্বয় যোজনায় ৫ লাখ ৮৭ হাজার রেশন কার্ড হোল্ডারদের ১৫ দিনের জন্য আগাম রেশন সামগ্রী প্রদান করা হবে। যারা সামাজিক ভাতা পান তাদেরকে এপ্রিল এবং মে মাসের ভাতার টাকা আগাম দেওয়া হবে। উজ্জ্বলা যোজনায় যারা গ্যাসের কানেকশন পেয়েছেন তাদের গ্যাসের সিলিন্ডার এর টাকা আগাম দিতে কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। রেগার শ্রমিকদের মজুরীর ৭৩ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এই টাকা অতিশীঘ্রই রিলীজ করে কেন্দ্রে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। শিক্ষাদপ্তরের মাধ্যমে স্কুলের প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্যেও তাদের ১৫ দিনের মিড ডে মিলের রেশন সামগ্রী আগাম বিতরণ করা হবে। ত্রিপুরার সব স্কুল এখন লকডাউনের কারনে বন্ধ রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, মিড ডে মিলের রেশন সামগ্রী ছাত্রছাত্রীদের বাড়ীতে পাঠানো হবে, কিন্তু কোন স্কুলের কোন ছাত্রছাত্রী মিড ডে মিলের রেশন সামগ্রী বাড়ীতে পেয়েছেন এমন খবর নেই। এখন পর্যন্ত কোন ছাত্রছাত্রীর বাড়িতেই চাল পাঠানো হয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিবাবকদের স্কুলে ডেকে ২ কেজি চাল, ১ কেজি আলু, ১ কেজি পেঁয়াজ, ১০ টাকা দামের ২টা সয়াবিন এর প্যাকেট, ২০০ গ্রাম এর সরিষার তেল দেওয়া হলেও ডাল কোথাও দেওয়া হয়নি। যা দিয়ে একটা বাচ্চা শিশুর এক সপ্তাহের খাবারও হবে না। অন্যান্য প্রতিশ্রুতির রূপায়নের কাজও একই রকমভাবে চলছে। একটা প্রতিশ্রুতি রূপায়নের কাজ শুরু না হতেই আরও পাঁচটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যেটা ২০১৮ সালে ভোটে জেতার জন্যে করা হয়েছিল।

লকডাউন শুরুর প্রথমেই প্রতিশ্রুতি ছিল স্বাস্থ্য কর্মীদের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে গিয়ে যা যা উপকরণ প্রয়োজন সব দেওয়া হবে। করোনা রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের কোন ক্ষতি হলে তাদেরকে ৪ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পরে তা বাড়িয়ে এখন দশ লাখ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু দেখা গেল স্বাস্থ্য কর্মীদের চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রির জন্যে মিডিয়ার সামনে এসে দাঁড়াতে হল।

সাধারণ মানুষকে পেনিক না হতে আশ্বাস দিয়ে গত ২৩ মার্চ ২০২০ মুখ্যমন্ত্রী এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, রাজ্যে চাল, ডাল, সরিষার তেল, পেঁয়াজ, চিনি, লবন ইত্যাদি সব নিত্যপণ্য সামগ্রীরই পর্যাপ্ত পরিমানে মজুত রয়েছে। রাজ্য সরকারের রেশনশপ, সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে সব কিছুতেই তিন মাসের স্টক রয়েছে। পরবর্তীতে আরও দুই মাসের নিত্যপন্য সামগ্রীর স্টক করার ব্যবস্থা হচ্ছে। কিন্তু দেখা গেল লকডাউন ঘোষণার পরের দিন থেকেই বাজারে জিনিসপত্রের ব্যপক কালোবাজারি শুরু হয়ে গেল। এখনও তা দিব্যি চলছে। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছিলেন যে, যেসব ব্যবসায়ীরা এসব কালোবাজারি করছেন প্রয়োজনে সরকার এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীতার মামলা চালাবেন। কিন্তু কোন ফল হয়নি। জিনিসপত্রের কালোবাজারি আজ কোন পর্যায়ে তা আজ সবার চোখের সামনে।

লকডাউনের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী এক ভিডিও বার্তায় করোনা ভাইরাস জনিত বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ২৩৫ কোটি টাকার একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেন। বিপিএল এবং অন্ত্যোদ্বয় পরিবার গুলোর পাশাপাশি এপিএল ভুক্ত ৫০ হাজার গরিব পরিবারদের চিহ্নিত করে তাদের হাতে প্যাকেজ- এর সুবিধাগুলি পৌঁছে দেওয়া হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী-র প্রতিশ্রুতি ছিল। এই চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন পঞ্চায়েত, জনপ্রতিনিধি ও বিডিও-দের নির্দেশ দেওয়া হয়ে্ছিল। কিন্ত এখন পর্যন্ত জানা গেলনা এই বাছাই পর্ব শেষ হল কিনা। অবশ্য বেশ কিছু জায়গা থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির তরফে অভিযোগ আসছে মণ্ডল নেতারাই এই বাছাইর কাজটি করেছেন এবং বহু ক্ষেত্রে প্রকৃত গরীবরা আবারও বঞ্ছিত হচ্ছেন।

২৮ মার্চ, ২০২০ এক ভিডিও বার্তায় রাজ্য পুলিশের এক অভিনব উদ্যোগের কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন এখন থেকে রাজ্যের প্রধান হাসপাতালগুলি, যেমন জিবি, আই জি এম, টি এম সি ও জেলা হাসপাতাল, মহাকুমা হাসপাতালগুলিতে রোগীর সাথে যারা আসেন দিনে দুইবার রান্না করা খাবার তাদের পৌঁছে দেবে পুলিশ। এই প্রক্রিয়া মার্চ ২৮, ২০২০ থেকেই ধর্মনগরে শুরু হয়ে গেছে বলে এদিন জানান মুখ্যমন্ত্রী। কিন্ত মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা অনুযায়ী কদিন এই কাজটা পুলিশকে দিয়ে করানো গেছে তা সবাই জানেন। আর আইন শৃঙ্খলা রক্ষার সাধারন ও আবশ্যিক কাজটি করে পুলিশ খাবার বিলির কাজটি লাগাতর করবে কিভাবে ঘোষণার আগে এটাও ভাবা উচিৎ ছিল সংশ্লিস্ট সবার।

সবজি বা বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী যাতে মানুষ ঘরে বসে সহজেই পেতে পারে, এ জন্য মানুষের বাড়ির সামনে গিয়ে ফেরি করার ব্যবস্থা করা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর আইডিয়াটি ছিল এর ফলে বাজারে এসে মানুষ যাতে জমায়েত না হয়, অর্থাৎ বাজার গুলিতে ভিড় এড়ানো সম্ভব হবে। কিন্ত মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা অনুযায়ী কদিন কতটা এলাকায় এই কাজটা সব্জি বিক্রেতাদের দিয়ে করানো গেছে তা তো এখন সবার চোখের সামনে। এক্ষণে আবার সবাই যেই সেই আগের মতোই বাজারগুলিতে ভীড় জমাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী শ্রী দেব এক ভিডিও বার্তায় এমন পরামর্শও দেন যে, এই লকডাউন চলাকালীন মানুষ যাতে তার জীবনের সুন্দর স্মৃতিগুলি ডায়েরিতে লিখে রাখেন। তাহলে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে এক আমূল পরিবর্তন আসবে। প্রত্যেকের জীবনের ভাল দিকগুলি বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শও দেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর এই উক্তি শুনে অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে পুনঃ উক্তি করলেন লকডাউনে প্রতিশ্রুতি রুপায়নের নামে যা চলছে তা অবশ্যই ডাইরিতে সত্যিই লিখে রাখার মত। কিন্তু যাঁদের দিন আনতে পান্থা ফুরায় তাদের ডাইরি লেখার সময় কই এই প্রশ্নও অনেকে তুলেছেন। তবে এটা ঠিক কিছু লোক ফেসবুকে করোনা মোকাবেলার সরকারী সিদ্ধান্তের পক্ষে বিপক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন। প্রশাসন এর থেকে কতটা শিক্ষা গ্রহন করেছেন তা জানা যায়নি। কিন্তু এটা জানা গেছে যে, শতাধিক লোক ফেসবুকে বিভিন্ন বিষয়ে মতামত দিতে গিয়ে কেইস খেয়েছেন।

করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত বিভিন্ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এক ভিডিও বার্তায়, বলেছিলেন করোনা মোকাবেলায় গরিবদের সুবিধার্থে, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনায় ১.৭০ লক্ষ কোটি টাকার রিলিফ প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। প্রতিটি কৃষককে দুই হাজার টাকা করে এপ্রিল থেকে তিন মাস ধরে প্রদান করা হবে। এতে রাজ্যের ২ লক্ষ ২১ হাজার কৃষক উপকৃত হবেন। আগামী তিনমাস দেশের ৮০ কোটি গরিব মানুষকে প্রত্যেক মাসে বিনামূল্যে ৫ কেজি করে গম বা চাল এবং ১ কেজি করে ডাল দেওয়া হবে। কিন্তু দেখা গেল অতিরিক্ত দুরের কথা, আগে প্রতিমাসে যে চাল ডাল পাওয়া যেতো সেটাও সব জায়গায় পাওয়া যাচ্ছেনা। ডাল তো একেবারেই নয়।

৬ এপ্রিল, ২০২০ মুখ্যমন্ত্রী এক ভিডিও বার্তায় বললেন ভারত সরকার রেগা খাতে ২৫৮.১৮ কোটি টাকা পাঠাল রাজ্যকে। চলতি অর্থ বছরের প্রথম কিস্তি হিসাবে এই টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে রেগার যাবতীয় বকেয়া মজুরি, দুই-একদিনের মধ্যেই শ্রমিকদের একাউন্টে দিয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর তরফে করোনা সংক্রান্ত লকডাউনের কারণে শ্রমিকদের ১০ শ্রমদিবসের কাজ অতিরিক্ত দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এমজিএন রেগায় দৈনিক মজুরি ১৯২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০২ টাকা করা হয়েছে বলেও সেদিন জানান মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এই ঘোষণার একমাস পরেও রেগার বকেয়া মুজরি অনেকেই পাননি বা নতুন কাজও বহু জায়গায় শুরু হয়নি। আর কিছু লোক বকেয়া পেয়ে থাকলেও সরকারীভাবে তা প্রকাশ না করা হলে তা জানার কোন উপায় নেই যে কজন রেগার বকেয়া টাকা পেলেন । কারন না সার্কুলার মোতাবেক সচিব ছাড়া কেউ এব্যাপারে মুখ খুলতেও নারাজ। আর সচিব এই মুহুর্তে রয়েছেন ছুটিতে।

শুধু কি তাই, এমনও প্রতিশ্রুতি ছিল, করোনা ভাইরাসের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে রেগার কাজ করা হবে। এবং কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সব জেলা শাসক ও বিডিওদের। কাজের জায়গায় জল এবং সাবান রাখার পাশাপাশি পুরোপুরি ভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি শ্রমিকরা যাতে মাস্ক ব্যবহার করে, সেই বিষয়টিও দেখার জন্যও বলা হয়েছিল। কিন্তু রেগা শ্রমিকদের কোথাও সরকারী ভাবে মাস্ক দেওয়া হয়েছে এমন খবর নেই। এমনটাও শোনা যায়নি যে কাজের স্থলে জল এবং সাবান রাখা ছিল। কমলপুরে এক রেগা শ্রমিক তো কাজের স্থলেই মারা গেলেন ।

বিভিন্ন সামাজিক ভাতার ব্যপারে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যেসব সামাজিক ভাতা প্রাপকদের অগ্রিম দুই মাসের ভাতা দিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া কেন্দ্র গ্রামীন গরিব, বিকলাঙ্গদের অতিরিক্ত এক হাজার টাকা করে পাঠাবে বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি নির্মাণ শ্রমিকদের আগামী তিন মাসে অতিরিক্ত এক হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি ছিল মুখ্যমন্ত্রী-র। রাজ্যে প্রায় ৪০ হাজার নির্মাণ শ্রমিক রয়েছেন। কিন্তু এখনও বহু শ্রমিক প্রতিশ্রুতি মতাবেক টাকা পান নি। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য ৮ই মে সচিবালয়ে বলেছিলেন ২৪ হাজার নির্মাণ শ্রমিকের একাউন্টে টাকা ঢুকে গেছে। বাকিদেরও ঢুকবে।

প্রতিশ্রুতি ছিল জনধন একাউন্টে মহিলাদের ৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি আগামী তিন মাসে তিনটি করে উজ্জ্বলা যোজনায় বিনামূল্যে সিলিন্ডার বাড়ীতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু কোন গ্যাস এজেন্সিই হোম ডেলিভারি দিচ্ছেন না। যানবাহন চলাচল কম বলে অনেকেই এজেন্সি থেকে গ্যাস আনতে যেতে পারছেন না। আবার মুখ্যমন্ত্রী গ্যাস সিলিন্ডার না কিনলে আগামি দিন ভর্তুকি দেওয়া হবেনা বলে তার ভিডিও বার্তায় জানালেন। বুজেন ঠেলা গরিব মানুষ যাবেন কোথায়। প্রকারন্তরে মানুষকে বিনামূল্যে যাতে গ্যাসের সিলিন্ডার দিতে না হয় তার জন্যেই এমন কঠিন দিনেও ততোধিক কঠিন নিয়ম বিধি সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। বহুক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ভর্তুকির টাকা যথাসময়ে ঢুকছে না।

৩১ মার্চ, ২০২০ লকডাউনের অষ্টম দিন ফের ভিডিও বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। এদিন তিনি ঘোষনা দিলেন সিনিয়র সিটিজেনরা ১১২ নম্বরে ফোন করুন, ঔষধ ঘরে পৌঁছে যাবে। অনেকেই ১১২ কল সেন্টারে ফোন করেছিলেন। কিন্তু কেউই ঔষধ সরবরাহ পরিষেবা পাননি। আর বহিঃরাজ্যে যারা আটকে পরেছেন, তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা সরকার করবে। কিন্তু দেখা গেল যে টাকা দেওয়া হয়েছে তা দিয়ে ভিন রাজ্যের হোটেলে থাকা খাওয়া দুষ্কর। প্রতিদিন খাওয়া বাবদ ১৫০ টাকা আর থাকা বাবদ সর্বোচ্চ দেওয়া হলো ১০০০ টাকা। তাই যেভাবেই হোক সবাই ফিরে আসতে উদ্গ্রিব। ২৭ হাজার লোক নাকি ৯ মার্চ পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করেছেন। অনেকে আবার নিজের টাকা খরচ করেই লাখ টাকায় এম্বুলেন্স ভাড়া করে চলে আসছেন।

৩১ মার্চ, ২০২০ মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন ৪৫০ জন হকারকে বিনামূল্যে রেশন সামগ্রী ও ১০০০ টাকা করে বিশেষ অনুদান প্রদান করবেন এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে খবরের কাগজ পৌঁছে দেবার জন্য চারটি গাড়ির ব্যবস্থা করা হবে। গোটা প্রক্রিয়াটি দেখভালের জন্য তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের একজন আধিকারিককে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। এনিয়েও কথা উঠলো গ্রামীণ এলাকার হকাররা কি দোষ করলেন। তাদের জন্যে বিনামূল্যে রেশন সামগ্রী ও ১০০০ টাকা করে বিশেষ অনুদান প্রদান নয় কেন?

এপ্রিল-এর ২ ও ৩ তারিখ সন্ধ্যায় করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই মরসুমের প্রথম কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় রাজ্যের পশ্চিম ও সিপাহীজলা জেলায়। রাবার বাগান, কৃষি জমি এবং বাড়িঘরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই খবর শোনার পরদিন সকালেই মুখ্যমন্ত্রী ছুটে যান সেই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে। সেখানে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিজের চোখে দেখেন। ঝড়-বৃষ্টিতে যে ক্ষতি হয়েছে তাদের মনের কথা শোনেন। মুখ্যমন্ত্রী তাদের ভরসা দিয়ে আসেন যে, যেকোনো দুর্যোগে তিনি পাশে থাকবেন। এদিন অনেকের হাতে সরকারি সাহায্য স্বরূপ চেক তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে আগরতলায় এসে কালবৈশাখীর ঝড়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের কথা তিনি জানান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন ক্ষতিগ্রস্থ প্রত্যেকের ব্যাংক একাউন্টে তিনদিনের মধ্যে ৫২০০ টাকা করে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এছাড়া কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের এই ক্ষয়ক্ষতি মিটিয়ে দেওয়ার প্রশ্নে সরকারের পক্ষ থেকে কানি প্রতি ১১০০ টাকা করে প্রত্যেকের একাউন্টে তিনদিনের মধ্যে দিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু কতজন এই টাকা পেলেন বা কারা পেলেন না মুখ্যমন্ত্রীও আর খোঁজ রাখার সময় পেলেন না। দপ্তরের সচিব ছাড়া কেউ কিছু বলার অধিকারী নন। সচিবদের তো শত চেষ্টা করেও টেলিফোনে পাওয়া যায়না। তাই আদৌ টাকা সবাই পেলেন কিনা জানা গেলো না।

৫ এপ্রিল, ২০২০ মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে জিবি হাসপাতালে বলে দেন যে মনিপুরে নাকি ১৯ জন করোনা আক্রান্ত। যদিও মনিপুরে তখন মাত্র দুজন করোনা আক্রান্ত রোগী ছিল। সম্ভবত মুখ ফস্কেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখ দিয়ে একথাটি বের হয়ে যায়। পরবর্তীকালেও তিনি আর এর সংশোধনীও দেননি। তাই ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি গোপাল রায় এটাকে বিপ্লব দেব- এর ছড়ানো গুজব অভিযোগ করে আগরতলায় পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপারের অফিসে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফ আই আর করেন। বিজেপি ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি গোপাল রায় – এর এই অভিযোগকে নস্যাৎ করতে গিয়ে উলটো গোপাল রায় – এর বিরুদ্ধে এমর্মে পূর্ব আগরতলা থানায় এফ আই আর করেন যে গোপাল রায় বেআইনি ভাবে তার ব্যক্তিগত প্যাড-এ অশোক স্তম্ভ ব্যবহার করেছেন। এবং বিশাল পুলিশ বাহিনি গোপাল রায় – এর বাড়িতে পাঠানো হয় তাকে গ্রেপ্তার করে আনতে। এই খবর পেয়ে গোপাল রায় – এর বাড়িতে ছুটে যান কংগ্রেস সভাপতি শ্রী পিযুষ বিশ্বাস ও কংগ্রেস নেতা সুবল ভৌমিক সহ অনে্কেই। পরবর্তিতে দেখা গেল ৫ এপ্রিল ২০২০ প্রশাসনের তরফে কংগ্রেস নেতা সুবল ভৌমিকের বিরুদ্ধেও একটি পৃথক এফ আই আর দায়ের করা হয়েছে। রাজধানীর পূর্ব থানায় সুবল ভৌমিকের বিরুদ্ধে এফ আই আর করেছে পুলিশ প্রশাসন নিজে। সুবল ভৌমিক সহ আরও ১৩ জনের বিরুদ্ধে এফ আই আর করার মূল কারন হল গোপাল রায়-এর বাড়িতে পুলিশ তদন্তে গেলে সেখানে ১৪৪ ধারা অমান্য করা সহ তাদের বিরুদ্ধে পুলিশী কাজে বাধাদানের অভিযোগ আনা হয়েছে। পাশাপাশি লকডাউন অমান্য সহ ডিজেস্টার ম্যানেজম্যান্ট অ্যাক্ট–এর ৫১ ধারা লঙ্ঘনেরও অভিযোগ আনা হয়েছে। সুবল ভৌমিক সহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে।

পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গোপাল রায়-এর এফ আই আর মূলে খবর প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রীকে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার অভিযোগে রাজধানীর একটি প্রভাতী দৈনিক পত্রিকা আজকের ফরিয়াদ সহ অন্য পাঁচটি ওয়েব পোর্টাল যথাক্রমে ত্রিপুরাইনফোওয়ে, দ্য নর্থ ইস্ট টাইমস, দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইনসাইড এন ই, সলমন নিজামি ইত্যাদি পাঁচটি অনলাইন নিউজ ওয়েবসাইট-এর বিরুদ্ধে এফ আই আর করা হয়েছে। অথচ, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গোপাল রায়-এর তরফে যে এফ আই আর-টি পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপারের অফিসে জমা করা হয়েছে সেটি এখনো পুলিশ অফিসিয়েলি গ্রহন করেনি। এভাবেই ত্রিপুরা জুড়ে করোনা মোকাবেলার কাজ চলছে। সাধারণ কোন কিছু নিয়েও কেউ সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলতে বা লিখতে পারবেনা। এমনকি ফেসবুকে মতামত ব্যক্ত করার অভিযোগে পর্যন্ত গ্রেপ্তার করে জেলে পুড়া হচ্ছে। একটি দুইটি নয়, এমন শতাধিক ঘটনা ঘটেছে। লকডাউনের এই বিপর্যয়ের মধ্যে কোন ভাবেই অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা নয়, দেখা যাচ্ছে সেগুলিই বেশি অগ্রাধিকার পাচ্ছে। আর মিডিয়া ? এক কথায় তিনি ভয় পাওয়ানোর কাজটি সঠিকভাবেই করতে পেরেছেন। তাই পারত পক্ষে সরকারের অমঙ্গল হচ্ছে বা হবে জেনেও রাজ্যের এক দুটি পত্রিকা একটি টি ভি চ্যানেল ও ওয়েব মিডিয়া ছাড়া কেউ গঠনমূলক সমালোচনাও এই মুহূর্তে করতে চান না।




You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.