অভাবের তাড়নায় দিশেহারা ভূমিপুত্ররা তাদের কার্ড বন্ধক রাখতে বাধ্য হচ্ছেন
প্রদীপ চক্রবর্তী
লকডাউনে একশ্রেনীর রেশনশপ ডিলার দাদন বানিজ্যে মেতে উঠেছে। গ্রাম এর মানুষের দারিদ্র্যতার সুযোগ নিয়ে ওরা একবিংশ শতাব্দীতে দেদার রেশনকার্ড বন্ধক রাখছেন। আর গরীব, ভূমিহীন জুমিয়াদের জন্য বরাদ্দ চাল ডাল তুলে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। আর যাদের রেশনকার্ড তাঁরা আকাশের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে বুকের ব্যথা লুকিয়ে রাখছেন। রাতে পেট মেঝেতে ফেলে ঘুমিয়ে পড়ছে। কি ভয়ংকর অবস্থা। এদের অভাব মোচনের জন্য তো কেউ নেই।
বলছি গারদাং এর কথা, উল্লেখ করা হচ্ছে আপাতত এক ডিলারের কথা আর তিনি যে কজনের কার্ড বন্ধক রেখেছেন তাদের নাম ঠিকানা আর ধার নেওয়া টাকার অংকের কথা।
ডিলার মহোদয় অভিজিৎ সেন। তিনি বিদ্যামোহন ত্রিপুরা-র কার্ড পনেরো হাজার টাকা, রামকুমার ত্রিপুরার কার্ড আট হাজার টাকা, মনোরঞ্জন ত্রিপুরার কার্ড কুড়ি হাজার টাকা, কাচাধনের পনেরো হাজার টাকা এবং ব্রজ ত্রিপুরার কার্ড পনেরো হাজার টাকায় বন্ধক রেখেছেন। নানা কারণে বিশেষ করে অভাবের তাড়নায় দিশেহারা হয়ে ভূমিপুত্ররা তাদের কার্ডগুলি একবছর মেয়াদী বন্ধক রাখতে বাধ্য হয়েছেন বলে খবর।
এ শুধু একটি দৃষ্টান্ত। পার্বত্য অঞ্চলে বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রায় সব ডিলারের কাছে একশ থেকে দেড়শ কার্ড বছর ভর থাকে। এটাই এদের নানা ছুতোর মধ্যে একটি সম্বল। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডিলারশীপ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। এদের একেক জনের সমতলে দালান বাড়ী। দামী গাড়ি নিয়ে চলাচল করেন। শুধু স্হানীয় হোমড়া চোমড়া, ব্লক বা এসডিএম অফিসের সাথে সখ্যতা রাখাই এদের মূলধন। তবে শুধু একটু বোঝাপড়া আর বিনিময় তো থাকতেই হয়।
প্রত্যন্ত জনপদের রেশনিং ব্যবস্হা খুবই নাজুক। শতকরা পঞ্চাশ জনের কপালে রেশনের যৎকিঞ্চিত জুটে না। সব কিছু ডিলারদের পকেটে ডুকে। অথচ পাহাড়ে তীব্র খাদ্য সংকট। সংকট পানীয় জলের। ম্যালেরিয়া তো লেগেই আছে। আর এখন তো ম্যালেরিয়া জাঁকিয়ে বসতে শুরু করেছে। অন্যদিকে পানীয় জলের জন্য সাধারণ উপজাতিয়রা দিনভর হন্যে হয়ে ঘুরছেন। অপরিশ্রুত পানীয় জল খেয়ে এদের জীবন ধারন করতে হচ্ছে। ফলে এরা ডায়েরিয়া,আমাসয়ে ভুগছে। চিকিৎসা পরিষেবা তো এদের কাছে দূর অস্ত। পাহাড়ে তো সড়ক যোগাযোগ যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। যেগুলি আছে সেগুলো না থাকার মতোই।এবড়ো থেবড়ো, উঁচু নীচু, কোথাও কোথাও পায়ে হাঁটা পথ ভেঙ্গে আছে, বিশাল গর্ত। চলাচল প্রায় বন্ধ। তো এঁরা আসবেন কি করে? এর উপর রেশনের জন্য জনজাতিদের ৫/৬ ঘন্টা টিলাটঙ্কর, ডিঙ্গাতে হয়। তারপর দিনভর অপেক্ষায় থেকে সন্ধ্যায় রিক্ত হাতে বাড়ীর পথে পা বাড়াতে হয়। অথচ বাড়ীর লোকজন হা করে তাকিয়ে থাকে কখন আসবে চাল,ডাল। তারপর উনুনে হাড়ি চাপবে। সাতদিনে একদিন হাড়ি চাপে না। এই পরিস্হিতির কারনেই এদের রেশনকার্ড বন্ধক রেখে দাদন নিতে হয়। ১০/১৫ হাজার দিয়ে যে কদিন চলে তাই ওদের কাছে আশীর্বাদ বলে ওরা মনে করে থাকে।
প্রশাসন যদি একসাথে ব্লক অফিস ভিত্তিক রেশনষপশগুলিতে হানা দেয় তাহলে অন্তত চল্লিশ হাজারের মত রেশনকার্ড উদ্ধার হবে। কিন্তু এই হানাদারী বা তল্লাসী কি প্রশাসন চালাবে?