লকডাউনে বিপন্ন শিশু মনে হাসি ফোটাতে হবে
প্রদীপ চক্রবর্তী
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে লকডাউনে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে শিশু ও কিশোর মন। এঁরা ছুটতে না পারায় কিংবা বন্ধুদের সাথে মিশতে না পারায় ক্রমশঃ মুষড়ে পড়ছে। এদের বস্তুত একাকীত্ব গ্রাস করছে যার প্রতিফলন ঘটছে মন ও মানসিকতায়। এদের মুখের হাসি দিন দিন মলিন হয়ে যাচ্ছে। কবে যে এদের মুখে হাসি ফুটবে, খিলখিল করে হাসতে পারবে তার ও কোন নিশ্চয়তা নেই। চারদেওয়ালের বন্দী জীবন এদের মন মানসিকতায় এমন প্রভাব পড়ছে যাতে ওরা খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। এদের জন্য চিন্তায় মা,বাবা ও অস্হির। মা চাইছে কি ভাবে তার শিশু সন্তানকে হাসিখুশি রাখা যায় সে চিন্তায়। অনেক শিশু লুডো, আবার ক্যারাম খেলছে মা বাবার সাথে। টিভিতে দেখছে শিশুদের নানা চ্যানেল। কিন্তু তাও কতক্ষণ? ওগুলিতে মন বসছে না। আবার মোবাইলে গেম খেলছে। দাদু, দিদা, মামার সাথে ভিডিও চ্যাট করছে।
এক অদ্ভুত বিড়ম্বনায় শিশু মন। যাদের বয়স তিন থেকে ছয় সাত বছরের মধ্যে, তারা তো প্রকৃত অর্থে বড্ড অসহায় হয়ে পড়েছে। মনে হয় এদের মন কেড়ে নিয়েছে করোনা আর লকডাউন।
আয়ূস দেবনাথ। হোলিক্রশের পড়ুয়া। বয়স তার বেশি হলে ৫ । নার্সারির পড়ুয়া। বাড়ী ওর নুতননগর। ছুটতে ভালবাসে। আবার একা একা রান্না বাটি খেলে। টিভিও কমবেশি দেখে না তাও নয়। মোবাইল পেলে তো কথাই নেই। এই বয়সেই টিউটরের কাছে যেতে হয়। কিন্তু লকডাউন সব বন্ধ করে দিয়েছে। মন মানসিকতা কেমন হতে পারে তা সহজেই বোঝা যায়।
ঠিক এমনই অলকের। বাড়ী বনমালীপুর। প্রথম শ্রেণীতে পড়ে।ওর অবস্থা ও পৃথক নয়। এমন কয়েকজনের সাথে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। মনে হয়েছে ওদের মধ্যে বিপন্নতা বাড়ছে। মন মানসিকতা বদলে যাচ্ছে, শৈশবের খিলখিল হাসি নেই, নেই দূরন্তপনা, ছোটাছুটি করা। এঁরা যেমন বিপন্ন তেমনি অভিভাবকদের মধ্যে ও দূশ্চিন্তা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।
ওদের স্কুলে ও ঝাঁপ। মাঝেমধ্যে অনলাইনে পড়াশোনা করছে। কিন্তু তাওতো ওরা মন থেকে পাড়ছে না। অদ্ভূত এক জীবন আর তার না বলা যন্ত্রনা। যাকে বলে অব্যক্ত যন্ত্রনা।
লকডাউনের প্রথমদিকে শিশুদের তো বটেই কিশোরদের ভালোই লেগেছিল। এঁরা তো বাবাকে কাছেই পায়না। কিন্তু করোনা বাবা,মাকে কাছে এনে দিয়েছে। এতে এরা বেজায় খুশি। কিন্তু দিন যাওয়ার সাথে সাথে তা স্বাভাবিক হয়ে যায়।
প্রবীন শিশু চিকিৎসক সত্যজিৎ চক্রবর্তী শিশুমনের অবস্হা স্বীকার করে নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন শিশুদের সাথে লুডো,ক্যারাম খেলার। ওদের আনন্দে রাখার চেস্টা করার। ওদের মন বুঝে চলারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তবে তাঁর পরামর্শ কোন অবস্থায় ওদের গালমন্দ না করার। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তবে এদের মনোজগতে আনন্দ সঞ্চারে সবাইকে সচেষ্ট থাকা আশু জরুরী।