লকডাউনের আশীর্বাদ নির্মল আকাশ, মুক্ত বায়ু
প্রদীপ চক্রবর্তী
এখন তো আকাশ নীল। নীল সমুদ্রে ডানা মেলে ভেসে বেড়াচ্ছে পাখীর দল, ঝাঁকে ঝাঁকে। এদের কাছে এখন আকাশ সমুদ্র, মহা সমুদ্র। আসমুদ্র হিমাচল জুড়েই মুক্ত আকাশ। শহর আগরতলায় তো, যা কিছুদিন আগে পর্যন্তও দেখা যেত না এখন বিহঙ্গের দল মনের আনন্দে নীল আকাশের সমুদ্রে বিতরন করছে। এদের যেমন আনন্দ।
এই শহর আগরতলায় চড়ুই পাখি অনেকটাই বিলুপ্ত হয়ে পড়ার উপক্রম। কিন্তু না,এরা আছে। এখন দলবেঁধে উড়ে বেড়াচ্ছে। ডাকছে কিচিরমিচির করে। সেই সাত সকাল থেকেই। মনে পড়ে সুকুমার রায়ের সেই "পাখী সব করে রব, রাতি পোহাইল, কাননে কুসুমকলি ফুটিয়া রহিল"।
এখন তো পাখির কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙ্গে। মন প্রফুল্ল হয়ে যায়। এ কি আনন্দ।
প্রসঙ্গ লকডাউনে নির্মল আকাশ,পরিবেশ। এখন তো পরিবেশ দূষণ প্রায় নেই। বিশ্বের মধ্যে দিল্লীর পরিবেশ প্রায়শই দূষিত থাকত। দূষন এমন হয়েছিল যে সেখানে আকাশ দেখাই যেত না। এখন সেখানে নীল আকাশ দেখা যাচ্ছে। নীল আকাশের শোভা এখন কলকাতা,ব্যাঙ্গালোর, বরোদা, আহমেদাবাদ, চেন্নাই ,ঢাকায়। কারন এখন লকডাউন। রেল চলে না,গনপরিবহন বন্ধ, বিমান বন্ধ। কলকারখানা ও বন্ধ, উৎপাদন নেই। সব বন্ধ।
তাই এখন মুক্ত আকাশ, বাতাসে শ্বাস নেওয়া দেহে মুক্ত আনন্দ। গুনগুনিয়ে বেরিয়ে আসে আহা আজ কি আনন্দ।
কয়েকমাস আগেও রাজধানী দিল্লীতে শ্বাস নেওয়া কষ্টসাধ্য ছিল। স্কুল,কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বিমান ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। দরজা জানালা বন্ধ করে মানুষকে ঘরে থাকতে হয়। তখনই মাক্স পড়ে চলাচল করতে হয়। বিশ্বের দূষিত শহরগুলির মধ্যে দিল্লী ১০ নম্বর তালিকায় স্হান পেয়ে যায়।
ফেডারেল পলিউশন কন্ট্রোল কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি বলেছে লকডাউনের ফলে বিশ্বের ৮৫ টি শহরের বায়ুমানের উন্নতি হয়েছে। পরিবেশবিদ সুনীল দাহিয়া বলছেন করোনা সংকট বিশ্বকে দেখিয়েছে জ্বালানি পোড়ানো কমানোর লক্ষ্যে যদি ব্যবস্হা নেওয়া হয় তাহলে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাবে। বাতাস হয়ে যাবে শ্বাস-প্রশ্বাস এর জন্য উপযুক্ত। কোনো কষ্টই হবে না।
আসলে ব্যাপারটি হচ্ছে আমাদের নির্মল বাতাসের জন্য আন্দোলন নেই, নেই চাহিদা। এই আন্দোলন তীব্র হলেই বাতাস তরতাজা করতে ব্যবস্হা নেবে সরকার। চীন যদি মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে বায়ুদূষণকে ৩২ শতাংশ হ্রাস করতে পারে তবে আমাদের দেশে কেন হবে না?
আমাদের রাজ্যেও পরিবেশ দূষণ যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে যদি এখন লাগাম না ধরা হয় তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের বড় ধরনের সমস্যায় পড়তেই হবে। কেননা এ রাজ্যে শ্বাসকষ্টের রোগী বাড়ছেই উত্তরোত্তর। এক কথায় লকডাউনের আশীর্বাদ নির্মল আকাশ, মুক্ত বায়ু।