চম্পামুরা গ্রামে চিরাচরিত চাষ থেকে আধুনিক ফুল চাষে যাত্রা
প্রবীর দত্ত, কৃষি সেক্টর অফিসার
November 16, 2025
প্রগতিশীল কৃষক শিবু শীল ও রূপন চৌধুরীর মতো ৪০ জন কৃষক বিশালগড়ের চম্পামুরা গ্রামের পরিবার বংশ পরম্পরায় কৃষিকাজ করে আসছে। তার দাদা এবং বাবা মূলত ধান, সবজি এবং ডাল চাষ করতেন, যা কেবল পরিবারের চাহিদা মেটাতে হতো। কিন্তু এখন ৪০ জন কৃষক কৃষিকাজকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। কৃষি বিভাগ থেকে আত্মা এর অধীনে আধুনিক ফুল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ পেয়ে ফুল চাষ শুরু করার পরিকল্পনা করেছেন। সেখান থেকেই ওনার ফুল চাষের ধারণা পান।
শিবু শীল ঐতিহ্যবাহী কৃষিকাজের পাশাপাশি ফুল চাষের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তিনি প্রথমে উৎসবের সময় গাঁদা ফুল চাষ শুরু করেন। তবে, এটি মৌসুমী আয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এবং নিয়মিত আয়ের উৎস হতে পারেনি।
ফুল চাষের সূচনা এবং সম্প্রসারণ: ২০২৪-২৫ সালে, প্রথমবারের মতো, তিনি উৎসবের সময় গাঁদা ফুলের চাষ করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে তার মনোযোগ ছিল শুধুমাত্র দীপাবলি এবং দুর্গা পূজা মতো উৎসবের জন্য ফুল চাষের উপর। তবে, এটি মৌসুমী কৃষিকাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, যার কারণে তাদের আয় নিয়মিত ছিল না। বছর ধরে, তিনি এই চাষ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনেছেন কৃষি ও উদ্যান বিভাগ থেকে এবং ধীরে ধীরে ফুল চাষের আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ শুরু করেছেন। ২০২৪-২৫ সালে, কৃষি বিজ্ঞানীদের পরামর্শে, তিনি ড্রিপ সেচ এবং মালচিংয়ের মতো আধুনিক কৌশল গ্রহণ করেন, যা তার ফুলের গুণমান এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করে। আত্মা ডেমোস্ট্রেশন, রাজ্য ও এম আই ডি এইচ প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণের সাথে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে ড্রিপ সেচ এবং মালচিংয়ের মতো আধুনিক কৌশল গ্রহণ করেন, যা তার ফুলের গুণমান এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
সারা বছর ধরে ফুল চাষ এবং বাজারে সাফল্য: শিবু শীল , রূপন চৌধুরীর মত অনেক কৃষক এখন সারা বছর ফুল চাষ করেন, যার কারণে তার আয় স্থির থাকে। গ্রীষ্ম কালীন সময়ে বাজার দর বেশি পেয়ে থাকেন। তারা উচ্চমানের গাছপালা নির্বাচন করে এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে চাষ করে। তাদের প্রধান বাজার পাইকারী বিক্রেতা, কিন্তু উৎসবের সময় তারা সরাসরি খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ফুল বিক্রি করে, যা তাদের বেশি লাভ দেয়। লাড্ডু জাতের গাঁদা ফুল সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়, যার বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
অবসর গ্রহণের পর আশীষ চক্রবর্ত্তী ও বাকি কৃষক তাদের ফসলের গুণমান বজায় রাখার জন্য নিয়মিত মাটি পরীক্ষা করান কৃষি বিভাগের অরুন্ধতী নগর গবেষণা কেন্দ্র থেকে । এর ফলে তারা জানতে পারে মাটিতে কোন পুষ্টি উপাদান আছে এবং কোনটির অভাব রয়েছে। তারা সেই অনুযায়ী সার ব্যবহার করে, যার ফলে তাদের ফসলের উন্নতি হয় এবং বাজারে তাদের চাহিদা বেশি থাকে।
প্রাকৃতিক চাষের সাথে ফুল চাষ : বর্তমানে চম্পামুরা গ্রামে ৫০ হেক্টর জমিতে প্রাকৃতিক চাষ শুরু হয়েছে ২০২৫ সাল থেকে । ধান সবজি সরিষা তিল ইত্যাদি এখন প্রাকৃতিক উপায়ে চাষ শুরু হয়েছে।
প্রাকৃতিক চাষে গাঁদা ফুল পোকার আক্রমণ কম করে সেই সাথে অতিরিক্ত আয় প্রদান করে।
গাঁদা ফুল ছাড়াও, তিনি সবজি ও ফুলের উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য পলি হাউস প্রদান করা হয়েছে , এর ফলে তাদের অতিরিক্ত টাকা আয় হয় ।
প্রাকৃতিক চাষ এবং জল সংরক্ষণের উপর জোর: চম্পামুরা গ্রামের কৃষকরা এখন প্রাকৃতিক চাষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। এই গ্রামে এখন জাতীয় প্রাকৃতিক চাষ প্রকল্পের অধীনে ২৩২ জন কৃষক নথিভুক্ত হয়েছেন।
তারা রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব কীটনাশক ব্যবহার করে, তাদের সবজি ও ফুলগুলিকে আরও প্রাকৃতিক এবং ভালো মানের করে তোলে। এছাড়াও, তারা ড্রিপ সেচ ব্যবস্থা ব্যবহার করে জল সাশ্রয় করছে। এর ফলে তাদের ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জল সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করা হচ্ছে।
জল সংরক্ষণ এবং টেকসই কৃষিকাজকে উৎসাহিত করার জন্য, তারা খামারে জল সংগ্রহের কৌশলও গ্রহণ করেছেন। এটি কেবল তার চাষাবাদের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেনি, বরং অন্যান্য কৃষকরাও তার পদ্ধতি গ্রহণে অনুপ্রাণিত হয়েছেন।
অন্যান্য কৃষকদের জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং অনুপ্রেরণা : তারা প্রাকৃতিক চাষ ও ফুল চাষ আরও সম্প্রসারিত করতে চান এবং নতুন জাতের ফুল চাষের পরিকল্পনা করছেন। অন্যান্য কৃষকদেরও ফুল চাষে অনুপ্রাণিত করছেন। অনেক কৃষক কৃষি বিভাগের কাছ থেকে চাষের কৌশল শিখছেন এবং নিজেরাই ফুল চাষ শুরু করছেন।
কৃষিকাজে আধুনিক কৌশল অবলম্বন করে চম্পামুরা গ্রামের কৃষক রা প্রমাণ করেছেন যে সঠিক কৌশল এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কৃষিকাজ করা গেলে এটি একটি সফল এবং লাভজনক ব্যবসায়ও পরিণত হতে পারে।
আরও পড়ুন...