মহাবিজয়: মহাযুতির না বিজেপির মহারাষ্ট্র বিজয়!
সঞ্জয়রায়
December 16, 2024
মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে মূলত দুটি জোটের প্রতিযোগিতা ছিল। একটি হল মহাযুতি জোট- বিজেপি , এনসিপি অজিত পাওয়ার গোষ্ঠী এবং মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্দের শিবসেনা গোষ্ঠী। যদিও নির্বাচনে মহাযুতি জোট ব্যাপক বিজয় অর্জন করেছে, পরোক্ষভাবে ইহা বিজেপির মহাবিজয়। জোট প্রায় 50% ভোট শেয়ার পেয়েছে; কোঙ্কন, উত্তর মহারাষ্ট্র এবং পশ্চিম মহারাষ্ট্র অঞ্চলে, এর ভোট ভাগ অর্ধেক এর বেশী অতিক্রম করেছে। মহাযুতি সমস্ত অঞ্চলে তার ভোটের ভাগ বাড়িয়েছে।অন্যদিকেমহারাষ্ট্র নির্বাচনের অন্য আরেকটি জোট হল - মহা বিকাশ আঘাদি ( MVA) জোট। কংগ্রেস , শিবসেনা উদ্ধব ঠাকরের দল এবং শারদ পাওয়ারের এন.সি.পি এই জোটের.মুখ্য পার্টি । কিন্ত.সমগ্র রাজ্য জুড়ে এর সমর্থন হ্রাস পেয়েছে। বিজেপি একাই 132টি আসন পেয়েছে, যা 288-শক্তিশালী বিধানসভায় প্রায় সংখ্যাগরিষ্ঠ, এবং মহাযুতি জোটের আসন সংখ্যা MVA- এর প্রায় পাঁচগুণ। তাছাড়াও আরো কিছু MLA আছেন যারা বিজেপি দলকে সমর্থন করছে।
রাজনৈতিকপ্রেক্ষাপটবিচারে 288টিআসনবিশিষ্টমহারাষ্ট্রবিধানসভারনির্বাচনঅত্যন্তগুরুত্বপূর্ণছিল। উল্লেখ করা যেতে পারে যে উত্তর প্রদেশের পরে সংসদীয় আসন সংখ্যার দিক থেকে মহারাষ্ট্রশুধুমাত্রদ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য নয়, এটি দেশের বৃহত্তম অর্থনীতির রাজ্যও, যাকে ভারতের বাণিজ্যিক বা আর্থিক রাজধানী বলা হয় এবংযেরাজ্যথেকেদেশেরজিডিপির প্রায় 13% অবদানআসে।মহারাষ্ট্রের ফলাফল বেশ কিছু প্রশ্নের মীমাংসা করেছে এবং ইহাসংশ্লিষ্ট সকল পার্টির নিজস্ব অস্তিত্ব ও আগামীদিনের পথ নির্দেশকা হিসাবে কাজ করবে। মহারাষ্ট্রের এই ফলাফল গণতন্ত্র ও বহুত্ববাদের জন্য নতুন দিশা উন্মুক্ত করেছে। মহারাষ্ট্রের জয়, অনেকটা হরিয়ানায় বিজেপির জয়ের কাছাকাছি--অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পন্ডিতদের চিন্তা, ও বিচার ও বিশ্লেষণ এর বাইরে । এই জয় বিজেপির আধিপত্য পুনরুদ্ধার করেছে, কারণ 2024 সালের সাধারণ নির্বাচনে, বিজেপি/ মহাযুতি জোটের ফলাফল মহারাষ্ট্রে অত্যন্ত শোচনীয় ছিল, মাত্র সতের পার্লামেন্ট আসন লাভ করে আট চল্লিশ আসনের মধ্যে। আপাতত বিজেপি দলের কোনো তাৎক্ষণিক প্রতিদ্বন্দ্বী নেই কারণ এটি ধর্মীয়, আঞ্চলিক, বর্ণ ও শ্রেণীগত অনুভূতিকে তার পক্ষে জোগাড় করতে সক্ষম হয়েছে, বিরোধীদের একদম নাস্তানাবুদও ধ্বংস করে দিয়েছে এবং বিজেপি.তার অন্যান্য জোট সঙ্গীদের অনেকটা অপ্রাসঙ্গিক করেতাদেরফলাফলপরবর্তী দর-কষাকষির ক্ষমতা অনেকটা হ্রাস করে দিয়েছে।ফলে বিজেপির দলের মুখ্যমন্ত্রী হওয়াটা ছিল সময়ের অপেক্ষা যা গতকাল সন্ধ্যায় বাস্তবায়ন হয়েছেও দেবেন্দ্র ফারনারবিস মহারাষ্ট্রের নতুন ( তৃতীয়বার) মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন, সঙ্গে আর ও দুই উপমুখ্যমন্ত্রী - দুই শরিক দল থেকে। জোটের গতিশীলতাই বিজেপির পক্ষে কাজ করেছে এবং সিদ্ধান্তমূলক পরিবর্তিত এনে দিয়েছে।
মহারাষ্ট্রের জয় ঝাড়খণ্ডে বিজেপি দলের পরাজয় সত্ত্বেওপ্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কর্তৃত্বকে শক্তিশালী করবে।সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসের যে প্রান্তিক লাভ হয়েছিল তা হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে বিধানসভার নির্বাচনে কংগ্রেস ও বিরোধীদের পরাজিত হওয়ার ফলে, অনেকটাইম্লান হয়ে যায়। ফলে জাতীয়. রাজনীতিতে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত আগামীদিনে দেখার সম্ভাবনা কম মনে হয় ( যদি না উওরপ্রদেশ বিধানসভার ফলাফল বিজেপির বিপক্ষে যায়) আর তাই কংগ্রেস আবারও ক্ষতির মুখে পড়েছে। বর্ণ শুমারির ( Caste census) জন্য কংগ্রেসের আওয়াজ এবং সংবিধান বিপদে পড়ার বিষয়ে বিরোধীদের লাইন বিজেপি কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষমহয়েছিল। হিন্দু একত্রীকরণের জন্য বিজেপির আহ্বানের পক্ষে অনেক বেশি গ্রহণকারী ভোটার ছিল আর অন্যদিকে MVA জোটকে প্রভাবশালী মারাঠাদের একটি মঞ্চ এবং মুসলিম তুষ্টির এক সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম হিসাবেগন্য করে জনগণ বর্জন করেছে বলে অনেকরাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত। কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি, বিশেষত মহিলাদের জন্য নগদ ডোলগুলিও মহাযুতির পক্ষে কাজ করেছিল। উদ্ধব ঠাকরেকে বিজেপির সাথে বিভক্ত হয়ে কংগ্রেস এবং এনসিপির সাথে জোট করার জন্য নির্বাচকমনডলী কঠোর শাস্তি দিয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন।শারদ পাওয়ারের চমকও রাজনৈতিক ভিত্তি অনেকাংশেই দুর্বল হয়ে গেছে এবং তার দল অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে। মহারাষ্ট্রের প্রাদেশিক রাজনীতি বিজেপির আক্রমনাত্মক হিন্দুত্বের প্ল্যাটফর্মের কাছে হার মেনেছে, সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি দল মারাঠা সেন্টিমেনটকে নিজেদের অনুকূলে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিজয়ের এই মুহুর্তে বিজেপিকে আরো বেশী প্রজ্ঞা ও রাষ্ট্রনায়কত্ব দেখাতে হবে এবং শরিকদের কিভাবে নিজেদের স্রোতে ধরে রেখে জটিল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলিকে সমাধান বা নিয়ন্ত্রণ করবে ও আগামী দিন নিজেদের প্রচার ও প্রসার বৃদ্ধি করে তাই লক্ষ্য রাখার ব্যাপার। পরিশেষে ইহা না বললে উপরোক্ত আলোচনা অপূর্ণ থাকবে যে মহারাষ্ট্র নির্বাচনের জয় সাধারণ জয় নয় -- ইহা নিঃসন্দেহে মহাবিজয় আর এ বিজয় বিজেপিকে অনেক দূর আগে নিয়ে গিয়েছে। যার কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী মোদি থেকে শুরু করে মহারাষ্ট্র রাজ্য নেতৃত্ব,জেলা- মন্ডল নেতৃত্ব ও অন্যান্য সম মনোভাবাপনন সংগঠন ও কর্মকর্তাদের সবার।
আরও পড়ুন...